Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, December 12, 2016

দ্বাদশ খণ্ড

দ্বাদশ খণ্ড


[ দূরে লছমীর গান ]


  


সজনী! কো কহ আওব মাধাই।


বিরহ-পয়োধি পার কিয়ে পাওব


  মঝু মনে নাহি পতিয়াই॥


এখন তখন করি দিবস গোঙায়লুঁ –


দিবস দিবস করি মাসা,


মাস মাস করি বরখ খোয়ায়লুঁ


খোয়ায়লুঁ এ তনুক আশা॥


  


[বিদ্যাপতির গান]


  


অঙ্কুর তপন তাপে যদি জারব কি করব বারিদ মেহে।


এ নব যৌবন বিফলে গোঙায়বঁ কি করব সো পিয়া লেহে॥



বিদ্যাপতি :

কে? রানি?



রানি :

আমি লছমী, চরণের দাসী।



বিদ্যাপতি :

তুমি? এই নিশীথ রাত্রে ঝড়-বৃষ্টির মাঝে তুমি একা এলে?



লছমী :

হ্যাঁ, একা। আর থাকতে পারলাম না বলেই তো আমার দুখের দোসরের অভিসারে বেরিয়েছি। বিদ্যাপতি! চার বছর ধরে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজ তোমার কাছে পরাজয় স্বীকার করতে এলাম। রাজা যেদিন আমাদের সকল প্রেমকে ম্লান করে চলে গেলেন, সেইদিন থেকেই এই এক বছর তোমায় ভুলতে চেয়েছি, তোমার প্রেম – তোমার গান – তোমার সকল কিছুকে উপেক্ষা করতে, অবহেলা করতে চেয়েছি। যত ভুলতে চেয়েছি, তুমি হয়েছ তত নিকটতম। এ কী দুর্বার আকর্ষণ তোমার! আমি ক্ষতবিক্ষত হলাম নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে, আর পারিনে। আমায় ঠাঁই দাও ওই চরণে।



বিদ্যাপতি :

রানি! তুমি কি সেই লছমী, না তার কঙ্কাল, প্রেত? সত্যই তুমি আজ একা – তোমার প্রেম তোমায় ছেড়ে গেছে!



রানি :

বিদ্যাপতি! প্রিয়তম! সত্যই আজ আমি নিঃসম্বল, তুমি ছাড়া ত্রিজগতে আজ আর আমার কেউ নেই। তুমি আমায় তাড়িয়ে দিয়ো না!



বিদ্যাপতি :

রানির মহিমা প্রেমের মহিমাকে তুমি এমন করে পদদলিত করবে লছমী, এ আমার স্বপ্নেরও অতীত ছিল। শোনো রানি – আমি চেয়েছিলাম তোমাকেই – রাজা যদি জীবিত থাকতেন হয়তো তোমাকেই, শুধু তোমাকেই চাইতাম। কিন্তু আজ আর তোমাকে চাই না। রাজার মৃত্যু তাঁর অচিন্তনীয় ত্যাগ আমাকে সত্যকার প্রেমের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। পাথর কুড়াতে গিয়ে আমি পেয়েছি পরশ-মানিক। তাঁর ছোঁয়ায় আমার সকল কাম হয়ে গেছে সোনা। তোমার মধ্য দিয়ে আমি পেয়েছি সত্য-কার লছমী দেবীকে – নারায়ণীকে, নারায়ণকে।



রানি :

নিষ্ঠুর! তুমি আমায় প্রত্যাখ্যান করছ? তুমি তা হলে এতদিন গানে গানে সুরে সুরে আমায় প্রতারণা করেছ? নির্মম ব্যাধের জাত তোমরা, বাঁশির সুরে ডেকে হরিণীকে বধ করাই তোমাদের ধর্ম।



বিদ্যাপতি :

দেবী! আমি তোমায় প্রতারণা করিনি। প্রত্যাখ্যানও করছিনে। তুমি যা চাও আমার সে প্রেম তো তুমি পেয়েছ।



রানি :

না, পাইনি; পেলে আমার অন্তরে এ হাহাকার থাকত না। শোনো বিদ্যাপতি, আমি চাই না শূন্য প্রেম – যাকে ধরা-ছোঁয়া যায় না, আমি চাই তোমাকে – তোমার প্রাণ-মন-দেহ-আত্মা – তোমার সকল কিছুকে।



বিদ্যাপতি :

আমি তো বলেছি, আমার কামনা একদিন ছিল – আজ আর নেই। এই কামনাশূন্য-দেহ নিয়ে শবসাধনা করে তোমারও মুক্তি হবে না, আমারও হবে অধোগতি। তোমার এই প্রেম শ্রীকৃষ্ণে – অর্পণ করো, তুমি সুখী হবে, শান্তি পাবে। আর তা না পারলেও তোমার প্রেম যদি সত্য হয়, আমাকে ভালোবেসে তুমি শ্রীভগবানের করুণা লাভ করবে।



রানি :

আমি চাই না, চাই না অন্যকিছু, চাই না মুক্তি। আমি চাই তোমাকে – স্বর্গে হোক, নরকে হোক, যেখানে হোক আমি চাই কেবল তোমাকে বিদ্যাপতি, তোমাকে। আমি তোমাকে পেতে চাই আমার বক্ষে, আমার চক্ষে, আমার প্রতি অঙ্গ দিয়ে তোমার প্রতি অঙ্গের পরশ পেতে!



বিদ্যাপতি :

লছমী! লছমী! ছাড়ো! ছাড়ো! যেতে দাও, পালিয়ে যেতে দাও আমাকে এখান থেকে।... তুমি প্রেম-অপভ্রষ্টা মায়াবিনী রূপ ধরে আমায় শ্রীভগবানের পথ থেকে ফিরাতে এসেছ। এ কী জ্বালাময় তোমার স্পর্শ! উঃ – আমি পালিয়ে গিয়ে এই তপস্যাই করব লছমী; যেন তোমাকে এই নীচে থেকে ঊর্ধ্বে টেনে তুলতে পারি। (ছুটিয়া চলিলেন)



লছমী :

বিদ্যাপতি! বিদ্যাপতি! নিষ্ঠুর!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !