প্রথম দৃশ্য
(শ্রীগৌরাঙ্গ-বিষ্ণুপ্রিয়ার বিবাহ-বাসর। সবেমাত্র কন্যা সম্প্রদান হইয়া গিয়াছে। বিপুল জনগণের (কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের) মুহুর্মুহু আনন্দ-ধ্বনির সহিত অজস্র যন্ত্রের মধুর সংগীত ও বাদ্যধ্বনি শুনা যাইতেছে। হুলু ও শঙ্খধ্বনির যেন বিরাম নাই।)
জনৈকা কন্যাপক্ষীয় দাসী :
বর কনেকে এখন বাসর-ঘরে নিয়ে এসো না গো! কন্যা সম্প্রদান তো কখন হয়ে গেছে। ওদের ছাদনাতলায় ধরে রেখে যেন সব ঠাকুর দেখছেন।
বরপক্ষীয় জনৈক লোক :
হ্যাঁ গো ঠাকরুন! আমরা ঠাকুরই দেখছি, এই যুগল-মিলন তো তোমরা মেয়ের দল সারারাত ধরে প্রাণ ভরে দেখবে আর আমরা বেচারা পুরুষের দল বাইরে বসে কড়িকাঠ গুনব।
অন্য আর একজন :
বেঁচে থাক দাদা। জোর বলেছিস। যুগল-মিলনের এই গোলোক- ধামে ঠাকুর এক-চোখোমি করতে পারবে না। আর করলেও আমরা তা মানব কেন। আধাআধি বখরা করো – রাজি আছি। অর্ধেক রাত আমরা দেখব – অর্ধেক রাত তোমাদের ছেড়ে দেব।
অন্য আর একজন বরপক্ষীয় লোক :
হেরে গেছে! হেরে গেছে। আমাদের বর বড়ো – বর বড়ো!
কন্যাপক্ষীয় দুইজন :
কক্খনো না, কনে বড়ো। এই আমরা তুলে ধরলাম কনেকে।
বরপক্ষীয় দুইজন :
পিঁড়ি যতই উঁচু কর না দাদা, আমাদের বরের নাগাল পাচ্ছ না-পুরো পাঁচ হাত লম্বা বর।
যাদব :
কাকিমা মানা করছেন, তোমরা দিদিকে এত উঁচুতে তুলো না, দিদি পড়ে যাবে।
কন্যাপক্ষীয় দাসী :
ওগো, মা ঠাকরুনরা বলছেন, তোমাদের বরই বড়ো। এখন ওদের বাসর-ঘরে আনতে ছেড়ে দাও।
বরপক্ষীয় লোক :
হেরে গেছে! কনে হেরে গেছে! দুয়ো! দুয়ো!
যাদব :
(মুখ ভ্যাঙচাইয়া) হেঁরেঁ গেঁছেঁ। হেঁরেঁ গেঁছেঁ। কখ্খনো না, দিদি বড়ো, জামাইবাবু ছোটো!
বরপক্ষীয় লোক :
তোমরা যতই চ্যাঁচাও, আমরা যুগল-মিলনের গান না গেয়ে ছাড়ছিনে। কনেকে বরের বাম-পাশে দাঁড় করাও, আমরা দেখি, যুগল-মিলনের গান গাই তারপর, – না কি বল বুদ্ধিমন্ত!
বুদ্ধিমন্ত :
নিশ্চয়! তাহলে মুকুন্দ তুমিই গানটা গাও আর আমরা ধুয়া ধরি।
(মুকুন্দের গান)
একী অপরূপ যুগলমিলন হেরিনু নদিয়া-ধামে
বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষ্মী যেন রে গোলোক-পতির বামে॥
একী অতুলন যুগল-মুরতি
যেন শিব-সতী হর-পার্বতী
জনক-দুহিতা সীতা দেবী যেন বেড়িয়া রয়েছে রামে॥
গৌরের বামে গৌর-মোহিনী
(যেন) রতি ও মদন চন্দ্র-রোহিণী
(তোরা) দেখে যারে আজ মিলন-রাসে
যুগল রাধা শ্যামে॥
(হুলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, উভয়পক্ষীয় লোকের আনন্দ-চিৎকার, মধুর বাদ্যধ্বনি ইত্যাদি)
No comments:
Write comments