মহালক্ষ্মী
হ্রীঙ্কাররূপিণী মহালক্ষ্মী
নমো অনন্ত কল্যাণদাত্রী।
পরমেশ্বরী মহিষমর্দিনী চরাচর-বিশ্ববিধাত্রী।।
সর্বদেব-দেবী-তেজোময়ী
অশিব-অকল্যাণ-অসুরজয়ী,
সহস্রভুজা ভীতজনতারিণী জননী জগৎ-ধাত্রী।।
দীনতা ভীরুতা লাজ গ্লানি ঘুচাও
দলন করো মা লোভ-দানবে।
রূপদাও, জয় দাও, যশ দাও, মান দাও,
দেবতা করো ভীরু মানবে।
শক্তি বিভব দাও, দাও মা আলোক,
দুঃখ দারিদ্র্য অপগত হোক,
জীবে জীবে হিংসা এই সংশয় দূর হোক
পোহাক এ দুর্যোগ রাত্রি।।
মহাদৈত্যকে হত্যা করিয়া ত্রিলোকে শান্তি স্থাপন করেন।
জীবের কামনার অবসান না হইলে পরব্রহ্মের সাক্ষাৎ লাভ বা উপলব্ধি হয় না। শুম্ভনিশুম্ভ তাহারই নিদর্শন। তাহারা ত্রিলোকবিজয়ী হইয়াও নিষ্কাম হইতে পারিল না। তাহাদের কামনা ভগবদ্শক্তিকে গ্রাস করিতে উদ্যত হইল। তাহাদের তপস্যা, তাহাদের শক্তি ত্রিলোকের দুঃখের কারণ, পীড়নের হেতু হইয়া উঠিল। আবার দেবতারা পরমাত্মারূপিণী মহাশক্তির তপস্যা করিতে লাগিলেন। তাঁহাদের আর্ত-প্রার্থনায় মূর্তি ধরিয়া আসিলেন মহাশক্তি – মহাসরস্বতীরূপে ; অর্থাৎ পরাজ্ঞানের শুদ্ধা কৌশিকীমূর্তি পরিগ্রহ করিলেন। পরাজ্ঞান বা শুদ্ধজ্ঞান ব্যতীত কামনার অবসান হয় না। তাই শুদ্ধজ্ঞানরূপিণী মহাসরস্বতী জগতের কল্যাণের জন্য, জীবের আর্তি নিবারণের জন্য, কাম ও লোভের প্রতীক শুম্ভ-নিশুম্ভকে অর্থাৎ বৈশ্যশক্তি ও শূদ্রশক্তিকে নিহত করিলেন। অর্থাৎ শ্রীশ্রীমহাকালীর শরণ লইলে পরিপূর্ণ ব্রক্ষ্মজ্ঞান বা ব্রাক্ষ্মীস্থিতি হয়; সত্ত্বগুণ তাহার ধর্ম। শ্রীশ্রীমহালক্ষ্মীর শরণ লইলে দেবশক্তিসম্পন্ন ক্ষত্রিয় হয়। শ্রীশ্রীমহাসরস্বতীর শরণ লইলে বৈশ্যত্ব ও শূদ্রত্ব দোষ বিনষ্ট হয়। এই তিন শক্তির ত্রিবেণী-তীর্থে জন্মগ্রহণ করেন সত্যকার ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মর্ষি।
মহাকালী দেন তেজ বা ব্রাহ্মণের তপস্যা, মহালক্ষ্মী দেন প্রেম, মহাসরস্বতী দেন জ্ঞান। এই সৎ-চিৎ-আনন্দরূপিণী ত্রিধারা শক্তিই পরব্রহ্ম বা পরমাত্মা।
No comments:
Write comments