পঞ্চম খণ্ড
[বিদ্যাপতির ভবন]
বিদ্যাপতি।
বিজয়া!
বিজয়া।
দাদা! ডাকচ?
বিদ্যাপতি।
হ্যাঁ, অনুরাধা কোথায় রে?
বিজয়া।
কী জানি। সে কি বাড়ি থাকে? সকাল হতে না হতে রানির যানবাহন এসে ওকে নিয়ে যায়। ও মাঝে মাঝে পালিয়ে আসে আমার কাছে, আর অমনি সাথে সাথে আসে রানির চেড়িদল। রানির অনুগ্রহ ওকে গ্রহের মতো গ্রাস করেছে। আবার রানির নাকি হুকুম হয়েছে এখন থেকে রাত্রেও তাঁর কাছে থাকতে হবে। এ কিন্তু রানির অত্যাচার দাদা। হয় তুমি এর প্রতিকার করো, নইলে আমিই রাজার কাছে আবেদন করব।
বিদ্যাপতি।
হুঁ! হ্যাঁরে বিজয়া, সেদিন অনুরাধা বলছিল, ওর বিয়ে হয়ে গেছে। সত্যই কি ওর বিয়ে হয়েছিল?
বিজয়া।
(সক্রোধে) আমি জানি না। আচ্ছা দাদা, তুমি কবি, সাধক। তুমি তো মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত দেখতে পাও। অনুরাধার দিকে কখনও চোখ ফিরিয়ে দেখেছ কি?
বিদ্যাপতি।
তা দেখিনি। কিন্তু ভুল তো তুইও করে থাকতে পারিস, বিজয়া। ওর স্বামীই যদি কেউ থাকেনই, সে এ পৃথিবীর মানুষ নয়, ওর স্বামী গিরিধারীলাল শ্রীকৃষ্ণ।
বিজয়া।
হ্যাঁগো হ্যাঁ, ওই নামের ছল করে ও যাকে পূজা করে আমি তাকে জানি। তুমি ইচ্ছা-অন্ধ, তাই দেখতে পাও না।
[অনুরাধার গীত]
সখী লো মন্দ প্রেম পরিণামা।
বিজয়া।
ওই যে হতভাগিনি আসছে।
বিদ্যাপতি।
তুই ওকে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দে তো!
বিজয়া।
দিচ্ছি দাদা!
বিদ্যাপতি।
আমায় এ কী পরীক্ষায় ফেললে, ঠাকুর!
অনুরাধা।
আমায় ডাকছিলে, ঠাকুর!
বিদ্যাপতি।
হাঁ রাধা! রানি কি তোমার রাত্রেও তাঁর কাছে থাকতে আদেশ করেছেন?
অনুরাধা।
হ্যাঁ, রানি বলেন দূতীর দূতিয়ালির প্রয়োজন রাত্রেই হয় বেশি। তবে এ তাঁর আদেশ নয়, আবদার।
বিদ্যাপতি।
দূতী! কীসের দূতিয়ালি রাধা?
অনুরাধা।
ঠাকুর! তুমি আমায় কী মনে কর? পাগল, নির্বোধ বা ওরকম একটা কিছু, না? তুমি যে এত যত্ন করে রোজ তোমার নব-রচিত গানগুলি শেখাও, তুমি কি মনে কর আমি তার মানে বুঝিনে? আর আমি কি শুধু রানিরই দূতিয়ালি করি? আমি কি লেখার গানেরও দূতিয়ালি করিনে?
বিদ্যাপতি।
আমি তোমার কাছে আর আত্মগোপন করব না, রাধা। সত্যই তোমার সুরের সেতু বেয়ে হয় আমাদের মিলন! তবে তুমি তো জান আমার এ প্রেম নিষ্কলুষ, নিষ্কাম। তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
অনুরাধা।
বলো।
বিদ্যাপতি।
তুমি কি সত্যিই আামায় ভালোবাস?
অনুরাধা।
না।
বিদ্যাপতি।
তুমি আমায় বাঁচালে, অনুরাধা!
অনুরাধা।
তোমায় আমি ভালোবাসিনে। কিন্তু আমি ভালোবাসি তাকে যাকে তুমি ভালোবাস। ঠাকুর! ঠাকুর! আমাকে এই বর দাও যেন জন্মে জন্মে তোমার ভালোবাসার জনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারি; তুমি যাকে ভালোবেসে সুখ পাও, তারই দাসী হতে পারি। আর দিনান্তে একবার শুধু ওই চরণ বন্দনা করতে পারি।
No comments:
Write comments