ত্রয়োদশ খণ্ড
[গঙ্গাবক্ষে ঝড়বৃষ্টি]
বিদ্যাপতি।
কে? কে তুমি চলেছ আমার আগে আগে দীপ জ্বালিয়ে পথ দেখিয়ে?
অনুরাধা।
ঠাকুর, আমি অনুরাধা!
বিদ্যাপতি।
অনুরাধা! অনুরাধা! নিয়ে চলো, নিয়ে চলো আমায়! এই ঝড়বৃষ্টি? কৃষ্ণরাতের মধ্য দিয়ে সেইখানে, যেখানে আছে অনন্ত প্রেম, অনন্ত ক্রন্দন, অনন্ত অতৃপ্তি।
অনুরাধা।
এসো কবি! এসো সাধক! এই অশান্ত কৃষ্ণ-নিশীথিনীর পরপারেই পাবে অশান্ত কিশোর চির-বিরহী শ্রীকৃষ্ণকে।
বিদ্যাপতি।
অনুরাধা! দাঁড়াও দাঁড়াও! কে যেন আমার পা জড়িয়ে ধরেছে! উঃ! রাধা! রাধা! আমায় কৃষ্ণসর্পে দংশন করেছে, জ্বলে গেল, বিষে আমার সকল দেহ জ্বলে গেল, জ্বলে গেল।
অনুরাধা।
ঠাকুর! ঠাকুর! দেখেছ ওই কৃষ্ণসর্পের মাথায় কী অপূর্ব মণি জ্বলছে। ও কৃষ্ণসর্প নয় ঠাকুর, তোমায় দংশন করেছে কৃষ্ণ-বিরহ! ওই বিরহ-ফণী যাকে দংশন করে তার মুক্তির আর বিলম্ব থাকে না।
বিদ্যাপতি।
অনুরাধা! অনুরাধা! কোথায় গেল অনুরাধা! চলে গেছে। আমি যাব! আবার গঙ্গার পথেই যাব। যতক্ষণ শেষ নিশ্বাস থাকে আমার ততক্ষণ ছুটব পতিতপাবনীকে স্মরণ করে! মাগো! পতিতপাবনী ভাগীরথী! আমি তোর কোলের আশায় এত পথ ছুটে এলাম, তবু তোর কোলে আমার এই পাপ-তাপিত বিষ-জর্জরিত দেহ রাখতে পারলাম না, মা। অঙ্গ আমার অবশ হয়ে এল, আর চলতে পারি না, মা! মাকে ডেকে মৃত্যু উপেক্ষা করে সন্তান এল এতদূর পথ, আর তুই এইটুকু পথ আসতে পারবি না মা ভক্ত ছেলের ডাকে? মা! মাগো!
গঙ্গা।
বিদ্যাপতি!
বিদ্যাপতি।
এ কী – মকরবাহিনী কলুষনাশিনী মাগো – তবে কি সন্তানের অন্তিম প্রার্থনা শুনেছিস মা! আঃ! আমার প্রাণ-মন-দেহ জুড়িয়ে গেল মা, তোর মাতৃকরস্পর্শে।
গঙ্গা।
বিদ্যাপতি, আমি এসেছি তোমাদের নিয়ে যেতে, তোমাদের আপন গেহে, নন্দনলোকে। ওই তোমার লছমী অনুরাধার সাথে আসছে – বৎস, তোমাদের লীলা শেষ, কার্য শেষ। শ্রীকৃষ্ণের লীলা-সাথী – তোমরা যুগে যুগে আস, ফিরে চলো বৎস তাঁর প্রেমময় কোলে।
[অনুরাধার গীত]
সজনী আজু শমন দিন হয়।
No comments:
Write comments