দ্বাদশ দৃশ্য
নিমাই :
নিত্যানন্দ ঠাকুর! তোমায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু চুপ করে সুবোধ বালকের মতো খেয়ে দেয়ে সুড়সুড় করে ফিরে আসবে। উৎপাত কোরো না যেন।
নিত্যানন্দ :
শ্রীবিষ্ণু! শ্রীবিষ্ণু! পাগলেই চঞ্চলতা করে। তুমি নিজে পাগল কিনা, তাই সকলকেই পাগল মনে কর।
ঈশান :
এই যে মাতোয়াল ঠাকুর এসেছেন। দাঁড়াও, ছিচরণ দুটো ধুইয়ে দিই, তারপর বাড়িতে ঢোকো। (পা ধোয়াইতে ধোয়াইতে) ওই পায়ের তো আর গুণের ঘাট নেই, ত্রিভুবনের বনের ময়লা কাদা পাঁক মেখে এসেছেন। পৃথিবীতে যা কিছু নোংরা সব বুঝি তোমার ছিচরণে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বৈতরণি পার হবার বুঝি আর কিছু পেলে না সব, এই অবধূতের চরণতরি ছাড়া?
শচীমাতা :
এই যে দুই ভায়ে এসেছ। আমি কখন থেকে পথ চেয়ে বসে আছি। বউমা, ভাত আনো।
নিতাই :
মা! এ ভাতের থালা না পর্বত? তুমি ভুল করেছ মা, আমি তো গিরি-গোবর্ধন ধারণ করিনি, আর বিশ্বম্ভরও আমি নই, বিশ্বম্ভর ওই নিমাই।
শচীমাতা :
নে এখন ফষ্টিনষ্টি রেখে খেতে বস দেখি। তুই-ই বা কীসে কম বাবা? নিমাই বিশ্বম্ভর, তুইও তো আমার বিশ্বরূপ। একী! একী! তোদের দুজনের অন্ন তিন ভাগ হল কেন? তোদের মাঝে কে ওই পঞ্চমবর্ষের দিগম্বর কৃষ্ণবর্ণ শিশু। ওই সুন্দর শিশুকেই তো কাল স্বপ্নে দেখেছিলাম। একী, কোথায় নিমাই, নিতাই কই! চতুর্ভুজ কৃষ্ণ ও শুক্লবর্ণ পরম মনোহর এক শিশু – হস্তে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-শ্রীহল-মুষল – বক্ষে শ্রীবৎস কৌস্তুভ, কর্ণে মকরকুণ্ডল – তাদের জায়গায় বসে আহার করছে। ওই–ওই– আমার পুত্র, পুত্রের হৃদয়ে আমার বধূমাতা – বিষ্ণুবক্ষে লক্ষ্মীর মতো বিরাজ করছে। একী মায়া! একী স্বপ্ন! নারায়ণ! নারায়ণ! একী খেলা তোমার? (মূর্ছা)
নিমাই :
অবধূত ঠাকুর, মা মূর্ছা গেলেন, ধরো! ধরো!
ঈশান :
মাতোয়াল ঠাকুর, ধরা পড়েছ। ধরা পড়েছ! আমি দেখেছি আমি চিনেছি তোমাদের! একী দেখলাম – একী দেখলাম আমি! আমি এখনও বেঁচে আছি তো? আমার জ্ঞান আছে তো? ঠাকুর! দাও, দাও তোমার উচ্ছিষ্ট আমার মাথায় মাখো, মুখে মাখো। তোমার পা ধোওয়া জল আমি ফেলিনি – রেখে দিয়েছি ঘড়ায় করে, ওকি আমি ফেলতে পারি? এই – এই আমি তা সব খেয়ে ফেলব, এক ফোঁটাও কাউকে দিচ্ছিনে। (জল পান) আজ চতুর্দশলোকে আমার মতো ভাগ্যবান আর কে আছে? অমৃত – অমৃত-কলশ পেয়েছি আমি – অমৃত-কলশ। (মূর্ছা)
No comments:
Write comments