মহাকালী
পরব্রহ্মরূপিণী মহাশক্তির দ্বিতীয় অবতার মহালক্ষ্মীরূপে। এইরূপে তিনি মহিষাসুর বধ করেন। আমাদের দেশে শ্রীদুর্গারূপে ইনি পূজিতা হন। প্রথম অবতার মহাকালীরূপা পরমাত্মার সংহার-শক্তি, দ্বিতীয় অবতার মহালক্ষ্মী রাষ্ট্রীয় শক্তি। এই মহাভারত যখনই তাহার রাষ্ট্রীয় শক্তি হারাইয়াছে তখনই মহালক্ষ্মীরূপিণী শ্রীদুর্গার শরণাপন্ন হইয়া সে তাহার বিলুপ্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি ফিরিয়া পাইয়াছে। শ্রীরামচন্দ্র এইরূপেই পূজান্তে বর লাভ করিয়া রাবণকে নিহত করিয়া ভারতে ধর্ম-অর্থ-শ্রী সম্পদরূপিণী সীতার উদ্ধার করেন। দেবশক্তি এই ক্রোধরূপী মহিষাসুরের সহিত যুদ্ধে পরাজিত হইয়া যখন বিষ্ণু ও শিবের শরণাপন্ন হন তখন তাঁহাদের ও অন্যান্য দেববৃন্দের তেজ হইতে সমুৎপন্না হন এই মহাশক্তি। অতএব ইনি সমস্ত দেবতার একীভূতা শক্তিস্বরূপা। অর্থাৎ সমস্ত দেবশক্তি একত্রীকৃত হইলে অবলুপ্ত স্বর্গ বা রাষ্ট্রীয় শক্তি উদ্ধার হয়। ইহাই এই অবতারের ইঙ্গিত। ইনি জীবকে, জগৎকে শ্রী-সম্পদরূপ যশ, খ্যাতি, জ্ঞান, মোক্ষ, মুক্তি, শান্তি দান করেন। মহিষাসুর ক্রোধের প্রতীক। ক্রোধই অশান্তি, অতৃপ্তি, বিরোধ, হিংসা, দ্বেষ, দ্বিধা, সন্দেহ প্রভৃতি অকল্যাণের হেতু। অক্রোধ অর্থাৎ প্রেম ব্যতীত সাম্য আসিতে পারে না। এই ক্রোধরূপী মহিষাসুর নিধনপ্রাপ্ত হইলেই অতৃপ্তি, অশান্তি, বিরোধ, হিংসা, কলহ প্রভৃতি জগতের সমস্ত অকল্যাণ বিদূরিত হয়। উহারাই মহিষাসুরের সেনাবৃন্দ। ক্রোধরূপী পশুকে হত্যা করেন বলিয়া দেবী পশুরাজ-বাহিনী। অর্থাৎ পশুশক্তি দেবশক্তির বাহন মাত্র। পশুকে হত্যা করিতে পশু হইবার প্রয়োজন নাই। পশুশক্তির সাহায্য অতীব প্রয়োজনীয়, তবু সে পশুশক্তি থাকিবে দেবশক্তির পায়ের তলায়।
ব্যক্তিগত জীবনে, সামাজিক জীবনে, জাতির জীবনে, নিখিল মনুষ্যসমাজে যখন অধৈর্য ও অবিশ্বাস বড়ো হইয়া ওঠে, তখন পরমাত্মার মহাকালী শক্তির শরণ লইলে, অধৈর্য অবিশ্বাস নিহত হয়, তাহারা ব্রাহ্মীস্থিতির মতো আনন্দে, শান্তিতে এই পৃথিবীতেই অমৃতভোগ করে। যোগী-মুনি-ঋষিরা সেই অমৃতের অধিকারী।
ব্যষ্টি ও সমষ্টিগত মনুষ্যসমাজে যখন অশান্তি, নিরাশা, সন্দেহ, ঈর্ষা, দ্বেষ প্রভৃতি ক্রোধরূপী মহিষাসুরের সেনাদল উৎপাত করে, তখন পরমাত্মার শ্রীশ্রীমহালক্ষ্মীর শক্তির শরণ লইলে এইসব উৎপাত দূর হয় ; তখন শ্রীসম্পদসম্পন্ন হইয়া আবার স্বর্গসুখ ভোগ করে।
No comments:
Write comments