Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Tuesday, December 13, 2016

অষ্টম দৃশ্য

অষ্টম দৃশ্য


(নিমাই-এর বহির্বাটী)


  



নিমাই :

মুরারি, আমাকে চিনতে পারছ?



মুরারি :

তোমাকে চিনেছি যখন তুমি তোমাকে চেননি তখন থেকে। তোমার মনে নেই? তখন আমি যোগবাশিষ্ট পড়ি। রাস্তায় সহপাঠীদের সাথে ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের ঘোর নিন্দা করতে করতে চলেছি, এমন সময় তুমি ভীষণ বিদ্রুপের হাসি হেসে উঠলে। তখন তোমার বয়স পাঁচ বৎসরের বেশি হবে না।



নিমাই :

হ্যাঁ, তারপর? আমার কিন্তু বিন্দু-বিসর্গ মনে নেই।



মুরারি :

এইরূপে, বারবার তুমি মুখ ভেঙচে আমাকে বিদ্রুপ করায় আমি রেগে গিয়েছিলাম, জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে এক অকাল-কুষ্মান্ড জন্মগ্রহণ করেছে। তাই শুনে তুমি যেন বললে, আচ্ছা এর শাস্তি পাবে। তারপর (মুরারি অভিভূতের মতো বলিতে লাগিলেন) দুপুরে যখন খেতে বসেছি তখন শঙ্খধ্বনির মতো কার কণ্ঠস্বর ভেসে এল ‘মুরারি’! আমি চমকিত হয়ে চেয়ে দেখি, তুমি গৌরসুন্দর নবনটবর শিশুরূপে আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে।



নিমাই :

তুমি ভক্তলোক, তাই ভক্তিবলে অন্য কাউকে দেখেছ। যাক, বলো।



মুরারি :

তুমি আরক্ত নয়নে আমার পানে চেয়ে বললে, ভগবানকে ভক্তি ছাড়া শুষ্ক জ্ঞানচর্চায় যারা পেতে চায়, আমি তাদের থালায় প্রস্রাব করি। বলে আমার থালে প্রস্রাব করে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে। তারপর তোমায় দেখি শ্রীগঙ্গাধর পণ্ডিতের টোলে। সেখানে আমায় কেবল সিলেটি-বাঙাল বলে খ্যাপাতে। তোমার যন্ত্রণায় যখন আমি টোল ছাড়ব ছাড়ব করছি, তখন একদিন তর্কের ছলে আমার অঙ্গে শ্রীহস্ত বুলালে, আর অমনি আমার সকল প্রাণ মন তোমার পায়ে যেন লুটিয়ে পড়ল।



নিমাই :

আজ কি মনে করে এসেছ?



মুরারী :

তুমি ডেকেছ, নইলে তোমার সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এমন ক্ষমতা কার আছে? আজ ভোরে স্বপ্ন দেখছিলাম, তুমি এসে আমায় ডাকছ– ‘মুরারি। তুমি আমায় যে রূপে দেখতে চেয়েছিলে, আজ সেই মহাপ্রকাশের উদয়-উষা দেখবে, এসো।’ আজ এসে তোমার কান্না-অরুণ চোখে সেই উদয়-উষার জবাকুসুমসঙ্কাশ দ্যুতি দেখলাম। তুমি নিজে ধরা না দিলে তোমায় ধরবে কে? তুমি নিজে দেখা না দিলে তোমায় দেখতে পাবে কার সাধ্য?



নিমাই :

মুরারি! শুনছ! কে বাঁশি বাজায়, ওই–ওই–দেখেছ–ওই মূর্তিই আমি দেখেছিলাম গয়া থেকে ফেরার পথে –


  


(সুরে)


 নব কিশলয়-শ্যামল তনু ঢল ঢল অভিরাম


অপরূপ রূপ-মাধুরী হেরিয়া মুরছিত কোটি কাম।


 গলে বনমালা শিরে শিখী-পাখা


 পীতধড়া-পরা ত্রিভঙ্গ বাঁকা


 বাজায় মুরলী রাধা রাধা বলি


   নওল কিশোর শ্যাম॥


  



নিমাই :

ওই পালিয়ে যায় – মুরারি – মুরারি ধরো ওই চঞ্চলকে – ধরো ওই কৃষ্ণকে – কৃষ্ণ–কৃষ্ণ। (মূর্ছা)



মুরারি :

ঈশান! ঈশান! শিগগির জল আন, প্রভু মূর্ছা গেছেন।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !