প্রথম দৃশ্য
প্রেক্ষাগৃহের সম্মুখে ধোঁয়া রঙের যবনিকা। সেই যবনিকার এক পাশে অস্পষ্ট শ্বেতকরবীর গাছ আঁকা। গাছ থেকে কতক ফুল ঝরে পড়েছে, কতক ফুল ঝর-ঝর। আরেক পাশে আঁকা পল্লবহীন শিমুলতরু – তাতে দু-একটি কুঁড়ি দেখা দিয়েছে। যেন শীত ফুরিয়েছে, বসন্ত আসছে। ... যবনিকা তোলার সঙ্গে সঙ্গে রাজাধিরাজ ফাল্গুনীর অগ্রদূত কোকিল মুহুর্মুহু কু্হুস্বরে রাজার আগমনবার্তা ঘোষণা করল। দূরে মৃদঙ্গ বীণা বেণুকা বেজে উঠল।
ভ্রমর, মধু-মক্ষী, প্রজাপতি, দোয়েল, শ্যামা প্রভৃতি বৈতালিকদল সমস্বরে গেয়ে উঠল :
(গান)
এল ওই বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে
চঞ্চল তরুণ দুরন্ত॥
বাঁশিতে বাজায় সে বিধুর
পরজ-বসন্তের সুর
পাণ্ডু কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে,
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত॥
কিশলয়-পর্ণে অশান্ত
ওড়ে তার অঞ্চলপ্রান্ত,
পলাশকলিতে তার ফুলধনু লঘুভার
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত॥
এলোমেলো দখিনা মলয় রে
প্রলাপ বকিছে বনময় রে,
অকারণ মনোমাঝে বিরহের বেণু বাজে
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।
চৈতালি :
ভয় কী সম্রাজ্ঞী! তব কণ্ঠের বিভব
সীমাহীন মহীয়ান বৈচিত্রে সুরের!
বহুরূপী কণ্ঠে তব বহু সুরে গান
শুনিয়াছি বহুবার, মেনেছি বিস্ময়।
গাহো গান আনন্দের। যদি সে পথিক
সত্যই আসিয়া যায়, সে যেন জানিতে
না পারে তোমার সখী মরমের কথা।
সে যেন আসিয়া হেরে, তুমি মূর্তিমতী
আনন্দ-প্রতিমা, তুমি সম্রাজ্ঞী বনের।
রাজাই সে হয় যদি, এসে দেখে যাক
রানির মহিমা তব, শির নত করি
উদ্দেশে সে নিবেদন করুক প্রণাম।
বাসন্তিকা :
সেই ভালো, গাহি গান আমি আনমনে,
এই অবসরে তুই বনরাজ্যে মোর
বিশৃঙ্খল যাহা কিছু অসুন্দর যত
সংযত সুন্দর করি রাখিবি সাজায়ে।
অসুন্দর কোনো কিছু হেরি রাজ্যে মোর
সুন্দরের আঁখি যেন ব্যথা নাহি পায়।
(গান)
দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে।
বাঁশরি বাজিল ছায়ানটে মনে মনে॥
যৌবনের বিহঙ্গ ওই ডেকে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে॥
বাজে বিজয়ডঙ্কা তারই এল তরুণ ফাল্গুনী।
জাগো ঘুমন্ত দিকে দিকে ওই গান শুনি।
বাইরে কে যাবি আয় সে শুধায় জনে জনে।।
চৈতালি :
রানি রানি। শোনো ওই দূরাগত গান,
কে যেন পথিক বুঝি পরান-পসারি
পরানের পসরা সে যায় হেঁকে গানে।
প্রথম দিনের দেখা তব সে তরুণ
এ যদি লো সেই হয় কী করিবে তবে?
মুখপানে চেয়ে রবে নির্নিমেষ আঁখি?
বাসন্তিকা :
কী মধুর কণ্ঠ, শোনো, শোনো লো চৈতালি,
শুনিতে দে প্রাণ ভরি, চল অন্তরালে।
No comments:
Write comments