Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, December 11, 2016

দ্বিতীয় দৃশ্য

ঝিলিমিলি


দ্বিতীয় দৃশ্য


[স্থান স্বপ্নপুরি। সাদা মেঘের পাল-টাঙানো সপ্তমী চাঁদের পানসিতে চড়িয়া হাবিব ও ফিরোজা ভাসিয়া চলিতেছে। শ্বেত-মরালীর সারি ডানা দিয়া দাঁড় টানিতেছে। তাহাদের ভিড় করিয়া ঘিরিয়াছে চকোর-চকোরী। ময়ূরকণ্ঠী আলোতে হাবিবের মুখ এবং ফিরোজার মুখ রাঙিয়া উঠিয়াছে। সারা আকাশ যেন জুঁই-বাগানের মতো বিকশিয়া উঠিয়াছে।]



ফিরোজা :

এ আমরা কোথায় এসেছি, হাবিব?



হাবিব :

(হাসিয়া) ছি, নাম ধরে ডাকতে নেই এখানে! এখানে আসতে হয় নাম ছারিয়ে, সকল নামের দিশা ছড়িয়ে। এখানে হাবিবও আসতে পারে না, ফিরোজাও আসতে পারে না।



ফিরোজা :

তবে যে আমরা এসেছি।



হাবিব :

একবার চাঁদের জ্যোৎস্না-মুকুরে ভালো করে নিজের মুখ দেখো দেখি।



ফিরোজা :

(সভয়ে) এ কী, আমি যে আমায় চিনতে পারছিনে! এ আমি কে?



হাবিব :

(হাসিয়া) কার মতো বোধ হয়?



ফিরোজা :

এ যেন – এ যেন সকলের মুখ! এ যেন শকুন্তলার, এ যেন মালবিকার, এ যেন মহাশ্বেতার মুখ! এ যেন লায়লির, এ যেন শিরীর মুখ!



হাবিব :

সত্যিই তাই, তোমার মুখে আজ নিখিল-বিরহিণী ভিড় করেছে। এখানে আসতে হয় শুধু ‘প্রিয়’ আর ‘প্রিয়া’ হয়ে। এখানে নর-নারী অ-নামিক। এ লোকে নর-নারীর পরিচয়-সংকেত ‘প্রিয়’ আর ‘প্রিয়া’। এখানে ডাকতে হয় শুধু ‘প্রিয়তম’ বলে।



ফিরোজা :

(লজ্জায় রাঙিয়া উঠিল, চাঁদকে ঘিরিয়া রামধনুর সাত-রঙা শোভা বিজলির মতো খেলিয়া গেল!) যাও! (কানে কানে) চকোর-চকোরী শুনতে পাবে যে!



হাবিব :

শুনুক। ধরায় আমাদের যে কথা কানাকানি হয়ে আছে, তারায় তারায় আজ তারই জানাজানির হুল্লোড় পড়ে গেছে। দেখছ না প্রিয়তম! কত নব নব তারা জন্ম লাভ করল সৃষ্টির নীহারিকা-লোকে, শুধু ওই কানে-কথাটি শুনবার লোভে। ওই কানে-কথা শুনবে বলেই তো চন্দ্রলোকে এত চকোর-চকোরীর ভিড়!



ফিরোজা :

এ কোন লোক, প্রিয়তম? (চাঁদ দুলিয়া উঠিল)



হাবিব :

দেখলে? চাঁদ দুলে উঠল তোমার ‘প্রিয়তম’ ডাকের নেশায়! ...এ স্বপ্ন-লোক।



ফিরোজা :

স্বপ্ন-লোক! তাহলে এ-স্বপ্ন টুটে যাবে? আবার তোমায় হারাব?



হাবিব :

হয়তো হারাবে, হয়তো হারাবে না; জানিনে। তো ... এ স্বপ্ন-লোক এত ক্ষণিক বলেই এত সুন্দর।...না, না, এ স্বপ্ন-লোক চিরদিনের, এ সুন্দরের আকাঙ্ক্ষা-লোক, এর কি মৃত্যু আছে? এর কি শেষ আছে?



ফিরোজা :

তবে ভয় হয় কেন? এখনই এর শেষ হয়ে যাবে মনে করে?



হাবিব :

ওই শেষের ভয় – ওই হারাবার ভয় আছে বলেই এত মধুর এ-লোক। তাই তো এমন জড়িয়ে ধরে আছি পরস্পরকে। চোখের পাতা ফেললেই এ স্বপ্ন টুটে যাবে ভয়েই তো এমন পলক-হারা হয়ে চোখে চোখে চেয়ে থাকি। ওই হারাবার ভয়েই তো চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র এমন বিপুল আবেগে পরস্পর পরস্পরের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে না – পায়ে পায়ে ঘুরে ফিরছে।



ফিরোজা :

তাহলে এই বেহেশ্‌ত?



হাবিব :

এই বেহেশ্‌ত।



ফিরোজা :

তাহলে আর যারা বেহেশ্‌তে এসেছে তারা কই? শিরী, লায়লি, জুলেখা? আর ফরহাদ, মজনু, ইউসুফ?



হাবিব :

আমাকে ভালো করে দেখো দেখি।



ফিরোজা :

(সভয়ে হাবিবকে জড়াইয়া ধরিল) ওগো, একী! তোমার এত বিপুলতা আমি সইতে পারব না। তুমি যেন নিখিল-পুরুষ, তুমি যেন অনন্তকাল ধরে কাঁদছ।



হাবিব :

(হাসিয়া ফিরোজার কপোলে তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়া মৃদু আঘাত করিতে লাগিল) ভয় নেই, প্রিয়তম! আর একবার দেখো, তুমি যাকে দেখতে চাইবে তাকেই দেখতে পাবে আমার মুখে।



ফিরোজা :

(তাকাইয়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিল) আচ্ছা বেহেশ্‌তের হুরপরি কই?



হাবিব :

তুমি ইচ্ছা করলেই তারা আসবে। এখানে বাসনা দিয়ে তাদের সৃজন করতে হয়।



ফিরোজা :

তারাও সব তাহলে আমাদের মধ্যে?



হাবিব :

হাঁ, এখানে – এই স্বর্গলোকে – শুধু দুটি নরনারী – তুমি আর আমি – অনন্তকাল ধরে মুখোমুখি বসে আছে। তাদের চোখে পলক নেই। বুঝি পলক পড়লেই বিশ্ব কেঁদে উঠবে। হারিয়ে যাবে সুন্দর এ স্বর্গলোক। হারিয়ে যাব আমি আর তুমি।



ফিরোজা :

(হাবিবকে জড়াইয়া ধরিল) প্রিয়তম!



হাবিব :

(ফিরোজার কপোলে কপোল রাখিয়া) প্রিয়তম!


[চন্দ্র সাথে দোল খাইতে লাগিল। চকোর-চকোরী উন্মত্ত হইয়া উঠিল। হাবিব ও ফিরোজ চাঁদের সাথে দোল খাইতে খাইতে অস্ত গেল।]

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !