গান
যাসনে মা ফিরে যাসনে জননী
ধরি দুটি রাঙা পায়।
শরণাগত দীন সন্তানে
ফেলি ধরার ধূলায়।।
(মা গো) ধরি দুটি রাঙা পায়।।
(মোরা) অমর নহি মা দেবতাও নহি,
শত দুখ সহি ধরণিতে রহি ;
মোরা অসহায়, তাই অধিকারী
মা গো, তোর করুণায়
দিব্য শক্তি দিলি দেবতারে
মৃত্যুবিহীন প্রাণ,
তবু কেন মা গো তাহাদেরই তরে
তোর এত বেশী টান!
(আজও) মরেনি অসুর, মরেনি দানব,
ধরণির বুকে নাচে তাণ্ডব,
সংহার নাহি করি সে-অসুরে
কেন যাস্ বিজয়ায়।।
(কন্ঠস্বর ধীরে ধীরে দূরে সরিয়া যাইতেছে)
জনৈক দেবতা :
আমরা দেবতা হলে কী হবে, কথায় ও কান্নায় ধরণির মানুষকে জিততে পারব না।
মানুষ :
মা গো! জানি আমরা দুর্বল। রোগ, শোক, দুঃখ, জরা, মৃত্যু অভাব, ঋণে নিত্য-জর্জরিত। আমাদের আয়ু শেফালি ফুলের মতো ; সন্ধ্যায় ফোটে, সকালে যায় ঝরে। তবু তারই মাঝে ডাকি তোকে, এই মায়া, এত অবিদ্যার ঊর্ধ্বে তুলে নিতে। ফুল ঝরে, তার আশা থাকে, পূজারি তাকে কুড়িয়ে স্থান দেবে দেবতার পায়ে। কিন্তু মানুষের জীবনে আজ সে-আশাও গেছে ফুরিয়ে।
দেবতা :
দেখেছিস, বলছিলাম না, ওরা কান্না আর চাটুবাদের জোরেই জিতে গেল।
মানুষ :
আমরা অসহায়, তাই ছেলে-ভুলানো খেলনা দিয়ে রাখিস ভুলিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে। মাতৃহীন শিশু-সন্তানকে ফেলে দিস দাসীর কোলে, কান্না ভুলাতে দিস হাতে চুষি-কাঠি!
দেবতা :
এই রে, সেরেছে! ওরা যা কান্না জুড়ে দিয়েছে, তাতে মা দয়াময়ী এতক্ষণ গলে গঙ্গাজল হয়ে গেছেন বুঝি! দে, ওদের শিগগির রাগিয়ে দে। ওরা একবার রেগেও যদি মাকে চলে যেতে বলে, অমনি মা ছলনাময়ী পালিয়ে আসবেন।
মানুষ :
ওই শোন, আমাদেরই মতো হতভাগ্য একদল সন্তান মাকে ভাসিয়ে দিয়ে গান গাইতে আসছে।
No comments:
Write comments