প্রথমখণ্ড
[মিথিলার কমলা নদীর তীরে গ্রাম। তাহারই উদ্যানবাটিকা দেবীদুর্গা মন্দির। কবি বিদ্যাপতি দুর্গাস্তব গাহিতেছেন।]
(স্তব)
নমস্তে শরণ্যে শিবে সানুকম্পে
নমস্তে জগদ্ব্যাপিকা বিশ্বরূপে
নমস্তে জগদ্বন্দ্য পদারবিন্দে
নমস্তে জগত্তারিণি ত্রাহি দুর্গে॥
অনুরাধা।
ঠাকুর! ঠাকুর!
বিদ্যাপতি।
(মন্দির-অভ্যন্তর হইতে) কে?
অনুরাধা।
আমি অনুরাধা, একটু বাইরে বেরিয়ে আসবে?
বিদ্যাপতি।
(মন্দির দ্বার খুলিয়া বাহিরে আসিল। বিরক্তির সুরে) একটু অপেক্ষা করলেই পারতে, অনুরাধা। এত বড়ো ভক্তিমতী হয়ে তুমি মায়ের নামগানে বাধা দিলে?
অনুরাধা।
আমায় ক্ষমা করো, ঠাকুর। অত্যন্ত প্রয়োজনে আমি তোমার ধ্যান ভঙ্গ করেছি। আমার কৃষ্ণগোপালের জন্য আজ কোথাও ফুল পেলুম না। তোমার বাগানে অনেক ফুল, আমার গিরিধারীলালের জন্য কিছু ফুল নেব? আমার গোপালের এখনও পুজো হয়নি।
বিদ্যাপতি।
তুমি তো জান অনুরাধা, এ বাগানে ফুল ফোটে শুধু আমার মায়ের পায়ে অঞ্জলি হওয়ার জন্য। এ ফুল তো অন্য দেব-দেবীকে দিতে পারিনে।
(মন্দির দ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন, মন্দির অভ্যন্তরে স্তব পাঠের মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল)
বিদ্যাপতি।
(গুনগুন স্বরে)
মা আমার মনে আমার বনে
ফোটে যত কুসুমদল
সে ফুল মাগে তোরই তরে
পুজতে তোরই চরণতল॥
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ –
অনুরাধা।
(অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে) ঠাকুর! ঠাকুর! চলে গেলে। তুমি কি সত্যিই এত নিষ্ঠুর? তবে কি আমার ঠাকুরের পুজো হবে না আজ? আমার কৃষ্ণগোপাল, আমার প্রিয়তম! তুমি যদি সত্য হও, আর আমার প্রেম যদি সত্য হয়, তা হলে আজ এই বাগানের একটি ফুলও অন্য কারুর পূজায় লাগবে না। এই বাগানের সকল ফুল তোমার চরণে নিবেদন করে গেলাম।
(প্রস্থান)
দেবীদুর্গা।
ক্ষান্ত হও বিদ্যাপতি! ও ফুল শ্রীকৃষ্ণ চরণে নিবেদিত। বিষ্ণু আরাধিকা যে ফুল শ্রীহরির চরণে নিবেদন করে গেছে, সে ফুল নেবার অধিকার আমার নেই।
বিদ্যাপতি।
মা! মা!
দেবীদুর্গা।
শোনো পুত্র, তুমি হয়তো জান না যে আমি পরমা বৈষ্ণবী, জগৎকে বিষ্ণুভক্তি দান করি আমিই।
বিদ্যাপতি।
তোর ইঙ্গিত বুঝেছি, মহামায়া। তবে তোরই ইচ্ছা পূর্ণ হোক ইচ্ছাময়ী; আমি আজ থেকে বিষ্ণুরই আরাধনা করব।
[ বিদ্যাপতির গীত ]
আমার শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে জপব আমি শ্যামের নাম॥
মা হল মোর মন্ত্রগুরু, ঠাকুর হলেন রাধাশ্যাম॥
বিজয়া।
দাদা! দাদা! শিগগির এসো। মা আমাদের ছেড়ে স্বর্গে চলে গেলেন।
বিদ্যাপতি।
অ্যা! বিজয়া! বিজয়া! মা নেই! মা চলে গেলেন?
No comments:
Write comments