সপ্তম দৃশ্য
(তাহার পরদিন দুপুরবেলা)
শচীমাতা :
নিমাই! তোর কী হয়েছে বাবা? গয়া থেকে পিতৃতর্পণ করে এসে কেবলই কাঁদছিস। এই দুপুর পর্যন্ত বউমা কতবার এসে ঘুরে গেল, একবার তাকে ডেকে দুটো কথাও বললিনে? তোর চোখের জলে যে ঘর উঠোন কাদা হয়ে উঠল, বাপ।
নিমাই :
(অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে) মা, গয়া থেকে এসে আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।
শচীমাতা :
কেন বাবা, কী জন্য কিছু ভালো লাগছে না? নদিয়ার শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত বলে তোর খ্যাতি, সহস্র পড়ুয়া তোর ছাত্র, কন্দর্পের মতন রূপ, বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মীর মতো আমার বউমা, তোর আবার দুঃখ কিসের, বাবা? আমি কত আশা করে বসেছিলাম, গয়ার কত গল্প শুনাবি এসে। কিন্তু এসে অবধি কেবলই অঝোর নয়নে কাঁদছিস। ভগবান আমাকে চিরদিন দুঃখ দিলেন। পর পর সাত মেয়ে মারা যাবার পর তোর দাদা বিশ্বরূপ এল আমার কোলে। কিশোর বয়সে সে আমাকে কাঁদিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে চলে গেল, তারপর তোর বাবা স্বর্গে গেলেন। তুই ছাড়া এখন যে আর আমার কেউ নেই, মানিক। তোকে পেয়েই আমার সকল দুঃখ ভুলে ছিলাম। তুই যদি সুখী না হোস, তা হলে আমার আর এ জীবনে কাজ কী!
নিমাই :
কী করব, মা, আমি যে আর কিছুতেই অশ্রু সংবরণ করতে পারছিনে। আমি কেবলই দেখছি নব-জলধর শ্যাম সুন্দরকান্তি পরম মনোহর এক কিশোর কেবলই বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে আমায় ডাকছে। গয়া থেকে ফেরার পথে কানাই নাটশালা গ্রামে প্রথম দেখি সেই দুরন্ত কিশোরকে বাঁশিতে তার সে কী অশান্ত আহ্বান, মা, তা না শুনলে বোঝাতে পারব না। সে বাঁশি বাজাতে বাজাতে চলে গেল বৃন্দাবনের পথে। আমিও ছুটলাম, কিন্তু পারলাম না তার সাথে যেতে – আমায় সকলে ধরে নিয়ে এল নদীয়ায়। মা, তুমি এখন যাও, বাইরে মুরারি গুপ্ত বসে আছেন, আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করে আসছি।
No comments:
Write comments