Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

আলো-আঁধারি

আলো-আঁধারি


বাদলের নিশি অবসানে মেঘ-আবরণ অপসারি


ওঠে যে সূর্য – প্রদীপ্ততর রূপ তার মনোহারী।


সিক্তশাখায় মেঘ-বাদলের ফাঁকে


‘বউ কথা কও’ পাপিয়া যখন ডাকে–


সে গান শোনায় মধুরতর গো সজল জলদচারী!


বর্ষায়-ধোয়া ফুলের সুষমা বর্ণিতে নাহি পারি!


  


কান্নার চোখ-ভরা জল নিয়ে আসে শিশু অভিমানী,


হাসির বিজলি চমকি লুকায় তার কাছে লাজ মানি।


কয়লার কালি মাখি যবে হিরা ওঠে,


সে রূপ যেন গো বেশি করে চোখে ফোটে!


নীল নভো ঠোঁটে এক ফালি হাসি দ্বিতীয়ার চাঁদখানি


পূর্ণশশীর চেয়ে ভালো লাগে – কেন কেহ নাহি জানি!


  


পথের সকল ধুলো কাদা মাখি যে শিশু ফেরে গো ঘরে,


সে কি গো পাইতে বেশি ভালোবাসা যত্ন জননী করে?


মুছাবেন মাতা অঞ্চল দিয়া বলে


শিশুর নয়নে অকারণে বারি ঝলে?


ধরার আঁচলে পাথরের সাথে সোনা বাঁধা এক থরে,


বিষে নীল হয়ে আসে মণি – সে কি অধিক মূল্য তরে?


  


ডুবে এক-গলা নয়নের জলে তবে কি কমল ফোটে?


মৃণাল-কাঁটার বেদনায় কি ও শতদল হয়ে ওঠে?


শত সুষমায় ফোটাবে বলিয়া কিরে


মেঘ এত জল ঢালে কুসুমের শিরে?


দগ্ধ লোহায় না বিঁধিলে সুর ফোটে না কি বেণু-ঠোঁটে?


তত সুগন্ধ ওঠে চন্দনে যত ঘষে শিলাতটে!


  


মুছাতে এল যে উৎপীড়িত এ নিখিলের আঁখিজল,


সে এল গো মাখি শুভ্র তনুতে বিষাদের পরিমল!


অথবা সে চির-সুখ-দুখ-বৈরাগী


আসিল হইয়া নিখিল-বেদনা-ভাগী!


জানে বনমাতা, গন্ধে ও রূপে মাতাবে যে বনতল


সে ফুল-শিশুর শয়ন কেন গো কণ্টক-অঞ্চল!


  


শুনে হাসি পায় এত শোকে হায়! বিশ্বের পিতা যার


‘হাবিব’ বন্ধু, হারায়ে পিতায় সে এল ধরা মাঝার!


খোদার লীলা সে চির-রহস্যময় –


বন্ধুর পথ এত বন্ধুর হয়!


আবির্ভাবের পূর্বে পিতৃহীন হয়ে – বার বার


ঘোষিল সে যেন, আমি ভাই সাথি পিতাহীন সবাকার!


আলোকের শিশু এল গো জড়ায়ে আঁধার-উত্তরীয়


জানাতে যেন গো ‘বিষ-জর্জর, এবার অমৃত পিয়ো!’


তৃষ্ণাতুরের পিপাসা করিতে দূর


হৃদয় নিঙাড়ি রক্ত দেয় আঙুর!


শোক-ছলছল ধরায় কেমনে হাসি অমিয়


আসিবে সবার সকল ব্যথার ব্যথী বন্ধু ও প্রিয়!


  


পূর্ণশশীরে হেরিয়া যখন সাগরে জোয়ার লাগে,


উথলায় জল তত কলকল যত আনন্দ জাগে!


তেমনই পূর্ণশশীরে বক্ষে ধরি


‘আমিনার’ চোখে শুধু জল ওঠে ভরি!


সুখের শোকের গঙ্গা-যমুনা বিষাদে ও অনুরাগে


বয়ে চলে, যেন ‘দজ্‌লা’ ‘ফোরাত’ বসরা-কুসুম-বাগেবসরা-কুসুম-বাগ : ইরাকের অন্তর্গত বসরা শহরের পুষ্পোদ্যান।!


  


কাঁদিছে আমিনাআমিনা : ইরাকের অন্তর্গত বসরা শহরের পুষ্পোদ্যান।, হাসিছেন খোদা,‘ওরে ও অবুঝ মেয়ে,


ডুবিয়াছে চাঁদ উঠিয়াছে রবি বক্ষে দেখনা চেয়ে,


ভবনের স্নেহ কাড়িয়া কঠোর করে


ভুবনের প্রীতি আনিয়া দিয়াছি ওরে!


ঘর সে কি ধরে বিশ্ব যাহার আলোকে উঠিবে ছেয়ে?


নিখিল যাহার আত্মীয় – ভুলে রবে সে স্বজন পেয়ে?


  


নীড় নহে তার – যে পাখি উদার অম্বরে গাবে গান,


কেবা তার পিতা কেবা তার মাতা, সকলই তার সমান!


নাহি দুখ সুখ আত্মীয়, নাই গেহ,


একের মাঝারে সে যে গো সর্বদেহ,


এ নহে তোমার কুটির-প্রদীপ ভোরে যার অবসান,


রবি এ – জনমি পূর্ব-অচলে ঘোরে সারা আশমান!’


  


সে বাণী যেন গো শুনিয়া আমিনা-জননীআমিনা-জননী : হজরতের জননী। রহে অটল,


ক্ষণেক রাঙিয়া স্তব্ধ রহে গো যেমন পূর্বাচল!


কহিল জননী আপনার মনে মনে, -


‘আমার দুলালে দিলাম সর্বজনে!’


থির হয়ে গেল পড়িতে পড়িতে কপোলে অশ্রুজল।


উদিল চিত্তে রাঙা রামধনু, টুটিল শোক-বাদল!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !