Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 13, 2016

মোহর্‌রম

নীল সিয়া আশমান, লালে লাল দুনিয়া –


আম্মাআম্মা : মাগো।! লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া।’


কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে,


সে কাঁদনে আঁশু আনে সিমারেরওসিমার : খুনী। ছোরাতে!


রুদ্র মাতম্মাতম্ : হাহা ক্রন্দন। ওঠে দুনিয়া-দামেশ্‌কে –


জয়নালেজয়নাল : হজরতের দৌহিত্র ইমাম হোসেনের একমাত্র পুত্র। কারবালা যুদ্ধের পর একমাত্র জীবিত পুরুষ-সদস্য। পরাল এ খুনিয়ারা বেশ কে?’


‘হায় হায় হোসেনা’, ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,


তলওয়ার কেঁপে ওঠে এজিদেরএজিদ : হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী শত্রু। ও পঞ্জায়!


উন্মাদ দুলদুলদুলদুল : হযরত আলির ঘোড়ার নাম। ছুটে ফেরে মদিনায়,


আলি-জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়!


মা ফাতেমা আশমানে কাঁদে খুলি কেশপাশ,


বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস!


রণে যায় কাসিমকাসিম : ইমাম হাসানের পুত্র, ইমাম হোসেনের জামাতা, সকিনার স্বামী। ওই দু-ঘড়ির নওশানওশা : বর।;


মেহেদির রংটুকু মুছে গেল সহসা!


‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পুরবি ও দখিনা


‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেলো সকিনা!’


কাঁদে কে রে কোলে করে কাসিমের কাটা-শির?


খান খান খুন হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর!


কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,


বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র!


গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমাফাতিমা : ইমাম হোসেনের ছোটো মেয়ে।,


‘আম্মা গো, পানি দাও, ফেটে গেল ছাতি, মা!’


নিয়ে তৃষা সাহারার দুনিয়ার হাহাকার,


কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার!


দুই হাত কাটা তব শের-নর আব্বাস,


পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশমনও ‘সাব্বাস’।


দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,


হাঁকে বীর, ‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা’।


কলিজা কাবাব-সম ভুনে মরু-রোদ্দুর,


খাঁ খাঁ করে কারবালা, নাই পানি খর্জুর।


মা-র স্তনে দুধ নাই, বাচ্চারা তড়পায়!


জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়?


দাউ দাউ জ্বলে শিরে কারবালা-ভাস্কর,


কাঁদে বানুবানু : আসগরের মাতা। –‘পানি দাও, মরে জাদু আসগরআসগর : ইমাম হোসেনের শিশু-পুত্র।!


পেল না তো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন,


ডাকে মাতা, – ‘পানি দেব ফিরে আয় বাছা শুন্!’


পুত্রহীনার আর বিধবার কাঁদনে


ছিঁড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাঁধনে!


তাম্বুতে শয্যায় কাঁদে একা জয়নাল,


‘দাদা! তেরি ঘর কিয়া বরবাদ পয়মালপয়মাল : বিনষ্ট।।’


হাইদরি হাঁক হাঁকি দুলদুল-আসওয়ারদুলদুল-আসওয়ার : ‘দুলদুল’ ঘোড়ার সওয়ার, ইমাম হোসেন।


শমশের চমকায় দুশমনে ত্রাসবার!


খসে পড়ে হাত হতে শত্রুর তরবার,


ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার।


নিঃশেষ দুশমন; ও কে রণ-শ্রান্ত


ফোরাতে নীরে নেমে মোছে আঁখি-প্রান্ত?


কোথা বাবা আসগর! শোকে বুক ঝাঁঝরা,


পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা!


ধুঁকে মল আহা, তবু পানি এক কাৎরাকাৎরা : এক বিন্দু।


দেয়নি রে বাছাদের মুখে কমজাতরাকমজাতরা : নীচমনাগণ।!


অঞ্জলি হতে পানি পড়ে গেল ঝরঝর,


লুটে ভূমে মহাবাহু খঞ্জর-জর্জর!


হলকুমেহলকুম : কণ্ঠনালী। হানে তেগতেগ : তরবারি। ও কে বসে ছাতিতে? –


আফতাবআফতাব : সূর্য। ছেয়ে নিল আঁধিয়ারা রাতিতে।


আশমান ভরে গেল গোধূলিতে দুপুরে,


লাল নীল খুন ঝরে কুফরেরকুফর : কাফের, অবিশ্বাসী। উপরে!


বেটাদের লোহু-রাঙা পিরাহাণ-হাতে, আহ্


আরশের পায়া ধরে কাঁদে মাতা ফাতেমা,


‘এ্যয় খোদা, বদলাতে বেটাদের রক্তের


মার্জনা কর গোনাগোনা : অপরাধ। পাপী কম্‌বখতেরকম্‌বখত্ : হতভাগ্য।!’


কত মোহর্‌রম এল, গেল চলে বহু কাল –


ভুলিনি গো আজও সেই শহিদের লোহু লাল!


মুসলিম! তোরা আজ ‘জয়নাল আবেদিন’,


‘ওয়া হোসেনা – ওয়া হোসেনা’ কেঁদে তাই যাবে দিন!


ফিরে এল আজ সেই মোহর্‌রম মাহিনা –


ত্যাগ চাই, মর্সিয়ামর্সিয়া : শোক-গীতি। -ক্রন্দন চাহি না।


উষ্ণীষ কোরানের, হাতে তেগ আরবির,


দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শির; –


তবে শোনো ওই শোনো বাজে কোথা দামামা,


শমশের হাতে নাও, বাঁধো শিরে আমামা!


বেজেছে নাকাড়া, হাঁকে নকিবের তূর্য,


‘হুঁশিয়ার ইসলাম, ডুবে তব সূর্য!


জাগো, ওঠো মুসলিম, হাঁকো হায়দরি হাঁক,


শহিদের দিনে সব লালে-লাল হয়ে যাক!


নওশার সাজ নাও খুন-খচা আস্তিন,


ময়দানে লুটাতে রে লাশ এই খাস দিন!’


হাসানের মতো পিব পিয়ালা সে জহরের,


হোসেনের মতো নিব বুকে ছুরি কহরেরকহর : হিংস্র ক্রোধ।;


আসগর সম দিব বাচ্চারে কোরবান,


জালিমের দাদদাদ : অভিশাপ। নেব, দেব আজ গোর জান!


সকিনারসকিনা : নবি-দৌহিত্র, ইমাম হোসেনের কন্যা। শ্বেতবাস দেব মাতা-কন্যায়,


কাসিমের মতো দেব জান্ রুধি অন্যায়!


মোহর্‌রম! কারবালা! কাঁদো ‘হায় হোসেনা!’


দেখো মরু-সূর্যে এ খুন যেন শোষে না!


দুনিয়াতে দুর্মদ খুনিয়ারা ইসলাম!


লোহু লাও, নাহি চাই নিষ্কাম বিশ্রাম!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !