Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, November 28, 2016

সুখবিলাসিনী পারাবত তুমি

সুখবিলাসিনী পারাবত তুমি


রৌদ্রোজ্জ্বল দিবসে তোমার আসিনি সজল মেঘের ছায়া,


তৃষ্ণা-আতুর হরিণী চোখে কী হবে হানিয়া মরীচি-মায়া!


আমি কালো মেঘ – নামি যদি তব বাতায়ন-পাশে বৃষ্টিধারে,


বন্ধ করিয়া দিবে বাতায়ন, যদি ভিজে যাও নয়নাসারে!


সুখবিলাসিনী পারাবত তুমি, বাদল রাতের পাপিয়া নহ,


তব তরে নয় বাদলের ব্যথা – নয়নের জল দুর্বিষহ।


ফাল্গুন-বনে মাধবী-বিতানে যে পিক নিয়ত ফুকারি ওঠে,


তুমি চাও সেই কোকিলের ভাষা তোমার রৌদ্রতপ্ত ঠোঁটে।


জানি না সে ভাষা, হয়তো বা জানি, ছল করে তাই হাসিতে চাহি,


সহসা নিরখি – নেমেছে বাদল রৌদ্রোজ্জ্বল গগন বাহি।


ইরানি-গোলাব-আভা আনিয়াছ চুরি করি ভরি ও রাঙা তনু,


আমি ভাবি বুঝি আমারই বাদল-মেঘশেষে এল ইন্দ্রধনু।


ফণীর ডেরায় কাঁটার কুঞ্জে ফোটে যে কেতকী, তাহার ব্যথা


বুঝিবে না তুমি, ধরণি তো তব ঘর নহে, এলে ভ্রমিতে হেথা।


ভ্রম করে তুমি ভ্রমিতে ধরায় এসেছ, ফুলের দেশের পরি,


জানিতে না হেথা সুখদিন শেষে আসে দুখ-রাতি আঁধার করি।


রাঙা প্রজাপতি উড়িয়া এসেছ, চপলতা-ভরা চিত্র-পাখা,


জানিতে না হেথা ফুল ফুটে ফুল ঝরে যায়, কাঁদে কানন ফাঁকা।


যে লোনা জলের সাত সমুদ্র গ্রাস করিয়াছে বিপুল ধরা,


সেই সমুদ্রে জনম আমার, আমি সেই মেঘ সলিল ভরা।


ভাসিতে যে আসে আমার সলিলে, তাহারে ভাসায়ে লইয়া চলি


সেই অশ্রুর সপ্ত পাথারে, পারায়ে ব্যথার শতেক গলি।


ভুল করে প্রিয়া এ ফুল-কাননে এসেছিলে, জানা ছিল না তব


এ বন-বেদনা অশ্রুমুখীরে; এ নহে মাধবীকুঞ্জ নব।


মাটির করুণাসিক্ত এ মন, হেথা নিশিদিন যে ফুল ঝরে


তারই বেদনায় ভরে আছে মন, হাসিতে তাদেরই অশ্রু ক্ষরে।


সেই বেদনায় এসেছিলে তুমি ক্ষণিক স্বপন, ভুলের মেলা,


জাগিয়া তাহারই স্মৃতি লয়ে কাটে আমার সকাল সন্ধ্যাবেলা।


এ মোর নিয়তি, অপরাধ নহে আমারও তোমারও – স্বপন-রানি!


আমার বাণীতে তোমার মুরতি বীণাপাণি নয় বেদনাপাণি।


তোমার নদীতে নিতি কত তরি এপার হইতে ওপারে চলে;


কাণ্ডারিহীন ভাঙা তরি মোর ডুবে গেল তব অতল তলে।


ওরা শুধু তব মুখ চেয়ে যায়, সুখের আশার বণিক ওরা,


আমি ডুবে তব দেখিলাম তল জলশেষে চোরা বালুতে ভরা।


ভয় নাই প্রিয়, মগ্ন এ তরি তব বিস্মৃতি-বালুকাতলে


দু-দিনে পড়িবে ঢাকা, উদাসীন, তুমি বয়ে যাবে চলার ছলে।


কুড়াতে এসেছে দুখের ঝিনুক ব্যথার আকুল সিন্ধুকূলে,


আঁচল ভরিয়া কুড়ায়ে হয়তো ফেলে দেবে কোথা মনের ভুলে।


তোমাদের ব্যথা-কাঁদন যেটুকু, সে শুধু বিলাস, পুতুলখেলা,


পুতুল লইয়া কাটে চিরদিন, আদর করিয়া ভাঙিয়া ফেলা।


মোর দেহমনে নয়নে ও প্রেমে অশ্রুজল নীরদ মাখা,


কী হবে ভিজিয়া এ বাদলে, রানি, তব ধ্যান ওই চন্দ্র তারকা।


সে চাঁদ উঠেছে গগনে তোমার-আমার সন্ধ্যাতিমির শেষে,


আমি যাই সেই নিশীথিনী-পারে যেথায় সকল আঁধার মেশে।


আমার প্রেমের বরষায় ধুয়ে তব হৃদি হল সুনীলতর –


সে গগনে যবে উঠিবে গো চাঁদ উজ্জ্বলতর তাহারে করো।


যদি সে-চন্দ্রহসিত নিশীথে বিস্বাদ লাগে তোমার চোখে,


তোমার অতীত তোমারে খুঁজিয়ো আমার বিধুর গানের লোকে।


সেথা ব্যথা রবে, রবে সান্তনা, রবে চন্দন-সুশীতলতা,


যে-ফুল জীবনে ঝরে না সে-ফুল হইয়া ফুটিবে তোমার ব্যথা।


আমার গানের চির-দাহ যাহা সে আছে গো নীলকন্ঠে মম,


চিরশেষে এল যে অমৃতবাণী, দিনু তা তোমারে হে প্রিয়তম!


আমার শাখায় কন্টক থাক, কাঁটার ঊর্ধ্বে তুমি যে ফুল –


আমি ফুটায়েছি তোমারে কুসুম করিয়া, সে মোর সুখ অতুল।


বিদায়-বেলায় এই শুধু চাই, হে মোর মানস-কানন-পরি,


তোমার চেয়েও তব বন্ধুরে ভালোবাসি যেন অধিক করি।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !