Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, November 28, 2016

নবযুগ

নবযুগ


  -বিশ বৎসর আগে


তোমার স্বপ্ন অনাগত ‘নবযুগ’-এর রক্তরাগে


রেঙে উঠেছিল। স্বপ্ন সেদিন অকালে ভাঙিয়া গেল,


দৈবের দোষে সাধের স্বপ্ন পূর্ণতা নাহি পেল!


যে দেখায়েছিল সে মহৎ স্বপ্ন, তাঁরই ইঙ্গিতে বুঝি


পথ হতে হাত ধরে এনেছিলে এই সৈনিকে খুঁজি?


কোথা হতে এল লেখার জোয়ার তরবারি-ধরা হাতে


কারার দুয়ার ভাঙিতে চাহিনু নিদারুণ সংঘাতে।–


হাতের লেখনী, কাগজের পাতা নহে ঢাল তলোয়ার,


তবুও প্রবল কেড়ে নিল দুর্বলের সে অধিকার!


মোর লেখনীর বহ্নিস্রোত বাধা পেয়ে পথে তার


প্রলয়ংকর ধূমকেতু হয়ে ফিরিয়া এল আবার!


ধূমকেতু-সম্মার্জনী মোর করে নাই মার্জনা


কারও অপরাধ ; অসুরে নিত্য হানিয়াছে লাঞ্ছনা!-


হারাইয়া গেনু ধুমকেতু আমি দু-দিনের বিস্ময়,


মরা তারাসম ঘুরিয়া ফিরিনু শূন্য আকাশময়।


  


সে যুগের ওগো জগলুল! আমি ভুলিনি তোমার স্নেহ,


স্মরণে আসিত তোমার বিরাট হৃদয়, বিশাল দেহ।


কত সে ভুলের কাঁটা দলি, কত ফুল ছড়াইয়া তুমি,


ঘুরিয়া ফিরেছ আকুল তৃষায় জীবনের মরুভূমি।


আমি দেখিতাম, আমার নিরালা নীল আশমান থেকে


চাঁদের মতন উঠিতেছ, কভু যাইতেছ মেঘ ঢেকে।


সুদূরে থাকিয়া হেরিতাম তব ভুলের ফুলের খেলা,


কে যেন বলিত, এ চাঁদ একদা হইবে পারের ভেলা।


  


সহসা দেখিনু, এই ভেলা যাহাদের পার করে দিল,


যে ভেলার দৌলত ও সওদা দশ হাতে লুটে নিল,


বিশ্বাসঘাতকতা ও আঘাত-জীর্ণ সেই ভেলায়


উপহাস করে তাহারাই আজ কঠোর অবহেলায়!


মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা দেখি উঠি শিহরিয়া,


দানীরে কি ঋণী স্বীকার করিল এই সম্মান দিয়া?


যত ভুল তুমি করিয়াছ, তার অনেক অধিক ফুল


দিয়াছ রিক্ত দেশের ডালায়, দেখিল না বুলবুল!


যে সূর্য আলো দেয়, যদি তার আঁচ একটুকু লাগে,


তাহারই আলোকে দাঁড়ায়ে অমনি গাল দেবে তারে রাগে?


নিত্য চন্দ্র সূর্য; তারাও গ্রহণে মলিন হয়;


তাই বলে তার নিন্দা করা কি বুদ্ধির পরিচয়?


এই কী বিচার লোভী মানুষের? বক্ষে বেদনা বাজে,


অর্থের তরে অপমান করে আপনার শির-তাজে!


দুঃখ কোরো না, ক্ষমা করো, ওগো প্রবীণ বনস্পতি!


যার ছায়া পায় তারই ডাল কাটে অভাগা মন্দমতি।

আমি দেখিয়াছি দুঃখীর তরে তোমার চোখের পানি,


এক আল্লাহ্ জানেন তোমারে, দিয়াছ কী কোরবানি!


এরা অজ্ঞান, এরা লোভী, তবু ইহাদেরে করো ক্ষমা,


আবার এদেরে ডেকে আল্লার ঈদ্গাহে করো জমা।


শপথ করিয়া কহে এ বান্দা তার আল্লার নামে,


কোনো লোভ কোনো স্বার্থ লইয়া দাঁড়াইনি আমি বামে।


যে আল্লা মোরে রেখেছেন দূরে সব চাওয়া পাওয়া হতে,


চলিতে দেননি যিনি বিদ্বেষ-গ্লানিময় রাজপথে,


যে পরম প্রভু মোর হাতে দিয়া তাঁহার নামের ঝুলি,


মসনদ হতে নামায়ে, দিলেন আমারে পথের ধূলি,


সেই আল্লার ইচ্ছায় তুমি ডেকেছ আমারে পাশে!–


অগ্নিগিরির আগুন আবার প্রলয়ের উল্লাসে


জাগিয়ে উঠেছে, তাই অনন্ত লেলিহান শিখা মেলি,


আসিতে চাহিছে কে যেন বিরাট পাতাল-দুয়ার ঠেলি,


অনাগত ভূমিকম্পের ভয়ে দুনিয়ায় দোলা লাগে,


দ্যাখো দ্যাখো শহিদানশহিদান : প্রাণোৎসর্গকারীগণ। ছুটে আসে মৃত্যুর গুলবাগে!


কে যেন কহিছে, ‘বান্দা আর এক বান্দার হাত ধরো,


মোর ইচ্ছায় ওর ইচ্ছারে তুমি সাহায্য করো,’


তাই নবযুগ আসিল আবার। রুদ্ধ প্রাণের ধারা


নাচিছে মুক্ত গগনের তলে দুর্দম মাতোয়ারা।


এই নবযুগ ভুলাইবে ভেদ, ভায়ে ভায়ে হানাহানি,


এই নবযুগ ফেলিবে ক্লৈব্য ভীরুতারে দূরে টানি।


এই নবযুগ আনিবে জরার বুকে নবযৌবন,


প্রাণের প্রবাহ ছুটিবে, টুটিবে জড়তার বন্ধন।


এই নবযুগ সকলের, ইহা শুধু আমাদের নহে,


সাথে এসো নওজোয়ান! ভুলিয়া থেকো না মিথ্যা মোহে।


ইহা নহে কারও ব্যাবসার, স্বদেশের স্বজাতির এ যে,


শোনো আশমানে এক আল্লার ডঙ্কা উঠিছে বেজে।


  


মোরা জনগণ, শতকরা মোরা নিরানব্বই জন,


মোরাই বৃহৎ, সেই বৃহতের আজ নবজাগরণ।


ক্ষুদ্রের দলে কে যাবে তোমরা ভোগবিলাসের লোভে?


আর দেরি নাই, ওদের কুঞ্জ ধূলিলুন্ঠিত হবে!


আছে হাদের বৃহতের তৃষা, নির্ভয় যার প্রাণ,


সেই বীরসেনা লয়ে জয়ী হবে নবযুগ-অভিযান।


আল্লার রাহে ভিক্ষা চাহিতে নবযুগ আসিয়াছে,


মহাভিক্ষুরে ফিরায়ো না, দাও যার যাহা কিছু আছে।


জাগিছে বিরাট দেহ লয়ে পুন সুপ্ত অগ্নিগিরি,


তারই ধোঁয়া আজ ধোঁয়ায়ে উঠেছে আকাশভুবন ঘিরি।


 একী এ নিবিড় বেদনা


 একী এ বিরাট চেতনা


জাগে পাষাণের শিরায় শিরায়, সাথে জনগণ জাগে,


হুংকারে আজ বিরাট, ‘বক্ষে কার পা-র ছোঁয়া লাগে,


কোন মায়াঘুমে ঘুমায়ে ছিলাম, বুঝি সেই অবসরে


ক্ষুদ্রের দল বৃহতের বুকে বসে উৎপাত করে!


মোর অণুপরমাণু জনগণ জাগো, ভাঙো ভাঙো দ্বার,


রুদ্র এসেছে বিনাশিতে আজ ক্ষুদ্র অহংকার।’

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !