Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

খদিজা

খদিজা


সদাগর-জাদি বিবি খদিজার সোনার তরি


ফেরে দেশে দেশে মণি-মাণিক্য বোঝাই করি।


সচ্ছলতার বান ডেকে যায় বাহিরে ঘরে,


তবু কেন সব শুনো-শুনো লাগে কাহার তরে।


কী যে অভাব রিক্ততা কোন চিত্ততলে


মরু-ভিখারিনি কী যেন ভিক্ষা মাগিয়া চলে!


  


‘সাদিক’সাদিক : সত্যবাদী। সত্যব্রতী আহমদ জানিত সবে


‘আমিন’ শুদ্ধাচারী সাধু যে গো হইল কবে।


‘তাহেরা’ শুদ্ধাচারিণী সাধ্বী আরব দেশে


সে-ই ছিল, এল প্রতিদ্বন্দ্বী অরুণ বেশে।


কেমন প্রতিদ্বন্দ্বী অরুন সাধু সে তারে


দেখিবে বলিয়া দ্বার খুলি রয় হৃদয়-দ্বারে।


হেথা ঘর ছাড়ি গিরি-শিরে ফেরে অরুণ যুবা,


সহসা তাহারে নাম ধরে ডাকে কে দিল্‌রুবা?


খোঁজে গিরি-গুহা মরু-প্রান্তর যে আলো-শিখা,


পাবে না কি তার দিশা, এই ছিল ললাটে লিখা?


জন্ম-ধেয়ানী বসি একদিন ধেয়ান মধুর


অসীম আলোক-পারাবারে ফেরে স্বপ্ন আতুর –


আহ্বানে কার ভাঙিল ধেয়ান, স্বপ্ন টুটে,


চিত্ত-কাননে আলোর মুকুল মুদিল ফুটে।


নিশিদিন শোনে যে দিলরুবার মঞ্জু-গীতি


অন্তর-তলে, আজ কি গো এল সেই অতিথি?


মেলিতে নয়ন টুটিল স্বপন! নহে সে নহে,


তাহেরা খদিজা পাঠায়েছে তার বার্তাবহে!


  


কুর্নিশ করি কহিল বান্দা, ‘মোদের রানি


দরশ-পিয়াসি তোমার, এনেছি তাহারই বাণী।


বিবি খদিজার প্রাসাদে তোমার চরণ-ধূলি


পড়িবে কখন, সেই আশে আছে দুয়ার খুলি।


বিশাল হেজাজহেজাজ : আরব দেশের পশ্চিমাঞ্চল, বর্তমানে সৌদি-আরব। আরব যাহার প্রসাদ যাচে,


যাচিতে প্রসাদ সে পাঠাল দূত তোমার কাছে!’


অন্তর-লোক-বিহারী তরুণ বুঝিতে নারে,


তবু আনমনে এল দূত সাথে খদিজা-দ্বারে।


  


সম্ভ্রম-নতা কহিল খদিজা সালাম করি,


‘হে পিতৃব্য-পুত্র! কত সে দিবস ধরি


তোমার সত্যনিষ্ঠা, তোমার মহিমা বিপুল,


তব চরিত্র কলঙ্কহীন শশী সমতুল,


তোমার শুদ্ধ আচার, চিত্ত মহানুভব –


হেরিয়া তোমারে অর্ঘ্য দিয়াছি নিত্য নব!


এই হেজাজের সকলের সাথে গোপনে আমি,


আমিন, তোমারে শ্রদ্ধা দিয়াছি দিবস-যামী!


বিপুল আমার বিত্ত বিপুল যশ গৌরব,


নিষ্প্রভ আজি করেছে তাহারে তোমার বিভব।


বিশ্বাসী কেহ নাই পাশে, তাই বিত্ত মম


হইয়াছে ভার, দংশন করে কাঁটার সম


মম বাণিজ্য-সম্ভার, মোর বিভব যত –


তুমি লও ভার, আমিন, ইহার ! চিত্তগত


সন্দেহ মোর দূর হোক! আমি শান্তমুখ


ভুলে রব মোর গত জীবনের সকল দুখ!


তোমার পরশে তব গুণে মম বিভব-রাজি


সোনা হয়ে যাবে, সহস্র-দলে ফুটিবে আজি!


তুমি ছাড়া এই সম্পদ মোর হেজাজ দেশে


রবে না দু-দিন, স্রোতে অসহায় যাইবে ভেসে!


আরবে তুমিই বিশ্বাসী একা, কাহারে আর


নাহি দিতে পারি নিশ্চিন্তে এ বিপুল ভার!’


  


তরুণ উদাসী বসিয়া বসিয়া ভাবে কী যেন –


‘ওগো খোদা, কেন কর পরীক্ষা আমারে হেন!


আমার চিত্তে সকল বিত্ত তুমি যে প্রভু,


তুমি ছাড়া মোর কোনো সে বাসনা নাহি তো কভু!’


মরীচিকা-মাঝে ভ্রান্ত-পথ সে মৃগের মতো


ভীরু চোখ দুটি তুলি কহে যুবা শ্রদ্ধানত, –


‘পিতৃতুল্য পিতৃব্য এ মাথার পরে


রয়েছেন আজও, তাঁরে জিজ্ঞাসি তোমার ঘরে


আসিব আবার, কহিব তখন যা হয় আসি!’


লইল বিদায় ; খদিজা হাসিল মলিন হাসি!


  


তরুণ তাপস চলিয়া গেল গো যে পথ বাহি


সকল ভুলিয়া খদিজা রহে গো সে পথ চাহি।


বেলা-শেষে কেন অস্ত-আকাশ বধূর প্রায়


বিবাহের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে, কোন মায়ায়!


‘জুলেখার’জুলেখা : মিশরের মন্ত্রী আচার্য মিশরের পত্নী, য়ুসোফের প্রতি প্রেমাসক্তির জন্য বিখ্যাত। মতো অনুরাগ জাগে হৃদয়ে কেন,


মনে মনে ভাবে, এই সে তরুণ ‘য়ুসোফ’য়ুসোফ : আল্লাহর অন্যতম রসুল। যেন!


দেখেনি য়ুসোফে, তবু মনে হয় ইহার চেয়ে


সুন্দরতর ছিল না সে কভু। বেহেশ্‌ত বেয়ে


সুন্দরতম ফেরেশতা আজ এসেছে নামি


এল জীবনের গোধূলি-লগনে জীবন-স্বামী!


ফোটেনি যে আজও সে মুকুলি মনে শতেক আশা,


শোনে কি গো কেহ ঝরার আগের ফুলের ভাষা!


চিরযৌবনা বাসনার কভু মৃত্যু নাহি,


মনের রাজ্যে অক্ষয় তার শাহানশাহি।


উদয়-বেলায় মন ছিল তার জলদে ঢাকা,


হেরেনি প্রেমের রবির কিরণ সোনায় মাখা।


আসিল জীবন-মধ্যাহ্নে যে – সে নহে রবি,


দিন চলি গেছে – হেরিল না দিনমণির ছবি।


বেলা বয়ে যায় – সেই অবেলায় মেঘ-আবরণ!


বিদারিয়া এল সোনার রবি কি ভুবন-মোহন!


  


আছে আছে বেলা, বেলা-শেষের সে অনেক দেরি,


পুরবিতে নয় – শ্রী রাগে এখনও বাজিছে ভেরি!


ওরে আছে বেলা, ভাঙেনিকো মেলা, ইহারই মাঝে!


প্রাণের সওদা করে নে, বরে নে হৃদয়-রাজে!


ফেরেনি রে নীড়ে এখনও বিদায়-বেলায় পাখি,


নাহিকো’ কাজল, আজও আছে জলভরা এ আঁখি।


শুকায়েছে ফুল, শুকায়েছে মালা, – নয়ন-জলে


রাজাধিরাজের হবে অভিষেক হৃদয়তলে।


হোক হোক অপরাহ্ন এ বেলা হৃদ-গগনে


এই তো প্রথম উদিল সূর্য শুভ-লগনে।


হোক অবেলায় – তবু এ প্রেমের প্রথম প্রভাত,


পহিল প্রেমের উদয়-উষার রাঙা সওগাত।


নূতন বসনে নূতন ভূষণে সাজিয়া তারে,


নব-আনন্দে বরিয়া লইবে হৃদয়-দ্বারে।


  


আবু তালিবের কাছে আসি কহে তরুণ নবি


তাহেরা খদিজা কয়েছিল যাহা যাহা – সে সবই।


বৃদ্ধ তালিব শুনিয়া পরম ভাগ্য মানি


খোদারে স্মরিয়া ভেজিল শোকরশোকর : কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ। জুড়িয়া পানি।


সুবৃহৎ ছিল পরিবার তাঁর পোষ্য বহু,


চিন্তায় তারই পানি হয়ে যেত দেহের লোহু।


দুর্ভিক্ষের হাহাকার ওঠে আবার জুড়ি,


যাহা কিছু ছিল সঞ্চিত যার গেল গো উড়ি।


হেন দুর্দিনে আসিল যেন গো গায়েবি ধ্বনি,


না চাহিতে এল শুভ ভাগ্যের আমন্ত্রণী।


সৌভাগ্যের এ দাওতদাওত : নিমন্ত্রণ। কেহ ফিরায় কি গো,


আপনি আসিয়া ধরা দিল আজ সোনার মৃগ।


  


আনমনে চলে তরুণ ‘আমিন’ সেই সে পথে,


যে-পথে দৃষ্টি পাতিয়া খদিজা কখন হতে


বসি আছে একা ; জাফরির ফাঁকে নয়ন-পাখি


উড়ে যেতে চায়, – কারে যেন হায় আনিবে ডাকি।


ধন্য যে আজ হেজাজেরহেজাজ : আরবের পশ্চিমাঞ্চল। মাঝে ভাগ্যবতী –


ওই আসে ওই তরুণ অরুণ মৃদুল-গতি।


‘মোতাকারিব’মোতাকারিব : আরবি ছন্দ বিশেষ। আর ‘হজজ্‌’হজজ্‌ : আরবি ছন্দ বিশেষ। ‘রমল্‌’রমল্‌ : আরবি ছন্দ বিশেষ। ছন্দ যত


লুটাইয়া পড়ে যেন গো তাহার চরণাহত।


বাতায়নে বসি খদিজার বুকে বেদনা বাজে,


না জানি কত না কন্টক ও-পথ মাঝে!


কঙ্করময় অকরুণ পথে চলিতে পায়ে


কত যেন লাগে, সে বাঁচে হৃদয় দিলে বিছায়ে!


আসিল তরুণ, কহিল সকল স্বপন সম,


দৃষ্টি নাহি কো কোথা ফোটে ফল গোপনতম


কোন সে কাননে আলোকে তাহারই! আপন মনে


খোঁজে সে কাহারে আকুল আঁধারে অজানা জনে।


খদিজা তার বাণিজ্য-ভার ‘আমিনে’ দিয়া


কহিল,‘সকলই দিলাম তোমারে সমর্পিয়া।’


নীরবে লইল সে ভার ‘আমিন’ স্বপ্নচারী, –


পুলকে খদিজা রুধিতে পারে না নয়ন-বারি।


  


লীলা-রসিক সে খোদার খেলা গো বুঝিতে পারে না এ চরাচর,


হাবিবহাবিব : বন্ধু, সখা। খোদার সাজিল আবার তাঁরই ইঙ্গিতে সওদাগর!


‘কাফেলা’কাফেলা : তীর্থযাত্রীর দল। লইয়া চলে আবার


‘শাম’শাম : আরবের অন্যতম দেশ, সিরিয়া। ‘এয়্‌মন্‌’এয়্‌মন্‌ : আরবের দেশ ইয়েমেন উত্তর দক্ষিণ দুইভাগে বিভক্ত। মরুভূমি-পার,


‘হোবাশা’হোবাশা : আরবের শহর বিশেষ। ‘জোরশ’জোরশ : আরবের শহর বিশেষ। কত পরদেশে ঘুরিল তরুণ বণিকবর,


সব পুণ্যের ভাণ্ডারী ফেরে পণ্য লইয়া দর বদর!


  


রোজ কিয়ামতে পাপ-সিন্ধুর নাইয়া হবে যে নবি রসুল,


হল বাণিজ্য-কাণ্ডারি সে গো, লীলা-বাতুলের মধুর ভুল!


বিদেশে ঘুরিয়া ফেরে স্বদেশ


পুন যায় দূর দেশের শেষ,


সোনার ছোঁয়ায় পণ্য-তরুর শাখে শাখে ফোটে মণির ফুল।


উপকূলে খোঁজে রতন – যাহারে খুঁজিছে রত্নাকর অকূল।


অনুরাগ-রাঙা খদিজার হিয়া ধৈরজ যেন মানে না আর,


ভার হয়ে ওঠে, তরুণ বণিক বয়ে আনে যত রতন-ভার।


প্রতিভা জ্ঞানের নাহি সীমা –


একী চরিত্র-মাধুরিমা,


একী এ উদয়-অরুণিমা আজি ঝলকি ওঠে গো দিগ্‌বিথার!


পল্লবে ফুলে উঠিল গো দুলে শুষ্ক মাধবী-লতা আবার


  


কী হবে এ ছার মণিসম্ভার বিপুল করিয়া নিরবধি,


পরানে তৃষ্ণা অমৃতের ক্ষুধা মিটিল না এ জীবনে যদি।


উদাসীন যুবা ফিরে না চায়,


কোন বিরহিণী খোঁজে গো তায়,


সিন্ধুর তাতে কী বা আসে যায় যদি তারে নাহি চায় নদী,


আপনাতে সে যে পূর্ণ আপনি – বিরাট বিপুল মহোদধি।


মনের দেশের ও যেন নহে গো, বনের দেশের চির-তাপস,


মন নিয়ে খেলা ও যেন বোঝে না, ও চাহে না সম্মান ও যশ।


নয়নে তাহার অতল ধ্যান


রহস্য-মাখা বিধু বয়ান,


ধরার অতীত ও যেন গো কেহ, ধরা নারে ওরে করিতে বশ।


ও যেন আলোর মুক্তির দূত, সৃজন-দিনের আদি-হরষ।


যত মনে হয় ধরার নহে ও, মায়াপুরীর ও রূপকুমার,


তত খদিজার মন কেন ধায় উহারই পানে গো দুর্নিবার।


যে কেহ হোক সে, নাহিকো ভয়,


খদিজা তাহারে করিবে জয়,


নহে তপস্যা একা পুরুষের – নব-তপস্যা প্রেমের তার।


হয় তারে জয় করিবে, নতুবা লভিবে অমৃত মরণ-পার।


  


ছিল খদিজার আত্মার আত্মীয় সহচরী ‘নাফিসা’ নাম,


কহিল তাহারে অন্তর-ব্যথা, হরেছে কে তার সুখ আরাম!


অনুরাগ-ভরে বেপথু মন


হুহু করে কেন সকল খন,


‘সখী লো, জহর পিইয়া মরিব, না পুরিলে মোর মনস্কাম।


সে বিনে আমার এই দুনিয়ার সব আনন্দ সুখ হারাম।


  


কে রেখেছে সখী শহদ্‌-শিরীনশহদ্‌-শিরীন : মধু, পুষ্পরস। হেন মধুনাম – মোহাম্মদ!


হেজাজের নয় – ও শুধু আমার চির-জনমের প্রেমাস্পদ!


সব ব্যবধান যায় ঘুচে


বয়সের লেখা যায় মুছে,


যত দেখি তত মনে হয় সখী, আমি উপনদী সে যেন নদ,


বন্দি করিতে তাহারে, নিয়ে যা শাদি-মোবারক-বাদি-সনদ।


দুতি হয়ে চলে নাফিসা একেলা প্রবোধ দানিয়া খদিজারে,


বলে, হেজাজের রানি যারে চায় বুলন্দ-নসিব বলি তারে।


প্রসাদ যাহার যাচে আরব,


করে গুণগান – রচে স্তব,


যাচিয়া সে যাহারে চাহে বরি নিতে, হানিতে সে হেলা কভু পারে?


বিরাট সাগরে পায় কি ঝরনা? মহানদী মেশে পারাবারে!


  


যৌবন? সে তো ক্ষণিক স্বপন, ছুঁইতে স্বপন টুটিয়া যায়,


প্রেম সেথা চির মেঘ-আবৃত, তনু সেথা ভোলে তনু-মায়ায়।


নাহি শতদল শুধু মৃণাল –


কামনা-সায়র টাল-মাটাল,


সেথা উদ্দাম মত্ত বাসনা ফুলবনে ফেরে করীর প্রায়,


সুন্দর চাহে ফুলের সুরভি, অরসিকে শুধু সুষমা চায়।


  


যুবা আহমদ মগ্ন ধেয়ানে, নাফিসা আসিয়া ভাঙিল ধ্যান,


কহিল, ‘আমিন! আজিও কুমার-জীবন যাপিছ হয়ে পাষাণ,


কোন দুখে বলো, তাপস-প্রায়


কোনো কিছু যেন চাহ না, হায়!


হেজাজ-গগনে তুমি যে হেলালহেলাল : নতুন চাঁদ।, তুমি কেন থাক চিন্তাম্লান?


  


রুচির শুভ্র হাসি হেসে বলে তরুণ ধেয়ানী মহিমময়,


‘বিবাহের মোর সম্বল নাই, বিবাহ আমার লক্ষ্য নয়!’


কহিল নাফিসা, ‘হে সুন্দর!


যাচে যদি কেহ তোমারে বর,


গুণে গৌরবে তুলনা যাহার নাই, গাহে যার হেজাজ জয়,


সেই মহীয়সী নারী যদি যাচে, তুমি হবে তার? দাও অভয়!’


ধ্যানের মানস-নেত্রে হেরিল তরুণ ধেয়ানী ভবিষ্যৎ –


কল্যাণী এক নারী দীপ জ্বালি গহন তিমিরে দেখায় পথ।


চারিধারে অরি – বন্ধুহীন


যুঝিছে একাকী যেন আমিন,


সে নারী আসিয়া বর্ম হইয়া দাঁড়াল সুমুখে, ধরিল রথ!


সাধনা-ঊর্ধ্বে সে এল সহসা শক্তিরূপিণী – সিদ্ধিবৎ!


  


এমনই চোখের চেনাচেনি নিতি, মানস-চক্ষে দেখেনি তায়,


দেখেনি তাহার অন্তরে কবে ফুটিয়াছে প্রেম শত বিভায়।


প্রেম-লোক সে যে জ্যোতির্মতী


চির-যৌবনা চির-সতী!


তবু নাফিসারে কহিল আমিন, ‘কোন ললনা সে, বাস কোথায়?’


নাফিসা হাসিয়া কহিল, ‘খদিজা, হেজাজ লুটায় যাহার পায়!’


  


হজরত কন, ‘বামন হইয়া কেমনে বাড়াব চন্দ্রে হাত!’


নাফিসা কহিল ‘অসম্ভব যা, সে আসে এমনই অকস্মাৎ!’


খদিজা শুনিল খোশখবর,


পরানে খুশির বহে নহর।


আবুতালিবের কাছে এল নিয়ে খদিজার দূত সে সওগাত!


চাঁদ যেন হাতে পাইল শুনিয়া আখেরে নবির খুল্লতাত।


তালিবের মনে খুশির বন্যা টইটম্বুর সর্বদাই,


আরবের রানি তাহিরা খদিজা বধূমাতা হবে, আর কী চাই।


‘আমার ইবনে আসাদ’ বীর


খদিজার পিতৃব্য ধীর


শুভ বিবাহের পয়গামপয়গাম : সুসংবাদ। তারে পাঠাল – দেশের রেওয়াজ তাই।


দিন ও তারিখ হল সব ঠিক, গলাগলি করে দুই বেয়াই।


  


খদিজার ঘরে জ্বলিল দীপালি, নহবতে বাজে সুর মধুর,


খদিজার মন সদা উচাটন বেপথু সলাজ প্রেম-বিধুর!


প্রণয়-সূর্য হল প্রকাশ,


ঝলমল করে হৃদি-আকাশ,


তরুণ ধ্যানীর ধ্যান ভেঙে যায়, ব্যথা-টনটন চিত্তপুর,


মরু-উদ্যান এল কোথা হতে বন্ধুর পথে যেতে সুদূর!


  


তরুণ নবির রবির আলোক চুরি করে এল এ কোন চাঁদ,


স্বর্গের দূত ধরিতে কি সে গো পেতেছে ধরায় নয়ন-ফাঁদ!


মানবীর প্রেম এই যদি


টলমল করে মন-নদী,


না জানি কেমন প্রেম তার করে সৃজন যে-জন নিরবধি!


নদী হেরি মন এমন, না জানি কী হয় হেরিলে সে জলধি!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !