Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, November 28, 2016

তোমারে ভিক্ষা দাও

তোমারে ভিক্ষা দাও


বলো হে পরম প্রিয়-ঘন মোর স্বামী!


আমাতে কাহারও অধিকার নাই, এক সে তোমার আমি।


ভালো ও মন্দে মধুর দ্বন্দ্বে কী খেলা আমারে লয়ে


খেলিতেছ তুমি, কেহ জানিবে না, থাকুক গোপন হয়ে!


আমারেও তাহা জানিতে দিয়ো না শুধু এই জানাইয়ো,


আমার পূর্ণ পরম মধুর, মধুর তুমি হে প্রিয়!


আমার জানা ও না-জানা সর্ব অস্তিত্বের প্রভু


একা তুমি হও! সেথা কারও ছায়া পড়ে নাকো যেন কভু!


তোমার আমার পরমানন্দ ফোটে ছন্দ ও গানে,


তুমি শুনো তাহা, তুমি লঘু ; গুরুজন হাত দিক কানে!


লতার প্রলাপ গোলাপের মতো কথা মোর কেন ফোটে!


তুমি জান, কেন উষা আসে ভোরে, কেন শুকতারা ওঠে।


ঘুমে জাগরণে শয়নে স্বপনে সর্বকর্মে মম


তব স্মৃতি তব নাম যেন হয় সাথি মোর, প্রিয়তম!


নিবিড় বেদনা হইয়া আমার বক্ষে নিত্য থেকো,


ভুলিতে দিয়ো না, আমি যদি ভুলি অমনি আমারে ডেকো!


তুমি যারে ভোলো, ভাগ্যহীন সে তোমারে ভুলিয়া যায়,


তুমি কৃপা করে চাহ যার পানে, সেই তব প্রেম পায়।


তুমি যারে ডাক, পাগল হইয়া সেই ধায় তব পথে,


বাঁশি না শুনিলে বন-হরিণী কি ছুটে আসে বন হতে?


চাঁদ ওঠে আগে, দেখে অনুরাগে চকোরী ব্যাকুলা হয়,


এত পাখি আছে, চাতকীরই কেন মেঘের সাথে প্রণয়?


কে দিলে তাহারে মেঘের তৃষ্ণা, হে রস-মধুর, বলো!


তুমি রস দিলে আঁখির আকাশ হয় জল-ছলছল।


চাঁদ যবে ওঠে, চকোর তাহার চকোরীরে ভুলে যায়,


চকোরীও ভোলে চকোরে, যখন চাঁদের সে দেখা পায়।


চাঁদের স্বপন ভুলিয়া দুজন নীড়ে কেন ফিরে আসে?


তব লীলা ধরা পড়ে যায়, দেখে কেউ কাঁদে, কেউ হাসে।


তুমি নির্গুণ নাকি? আমি দেখি গুণের অন্ত নাই,


ভিক্ষা যাচ্ঞা করিতে আসিয়া শুধু তব গুণ গাই!


ভুলে যাই আমি কী ভিক্ষা চাই, পরান কাহারে যাচে,


খুঁজিয়া পাই না ভিক্ষার ঝুলি, চোরে চুরি করিয়াছে!


মন হাসে, প্রাণ কাঁদে! বলে, জানি চুরি করে কোন চোরে।


তোমারে যে চায় ভিক্ষা, তাহার ঝুলিটিও নাও হরে!


যে হাতে ভিক্ষা চায়, ভিখারির সে হাত কাড়িয়া লও,


হে মহামৌনী! কাঁদ কেন এত? কথা কও কথা কও!


কত যুগ গেল, কত সে জনম শুনিনি তোমার কথা,


এত অনুরাগ দিয়ে, বৈরাগী, কেন দিলে বধিরতা?


তোমারে দেখার দৃষ্টি দিলে না, দিলে শুধু আঁখিজল,


অশ্রু তোমার কৃপা ; তবু আঁখি হল নাকি নির্মল?


দৃষ্টিরে কেন ফিরাইয়া দাও – তব সৃষ্টির পানে?


বলো, বলো, কোথা লুকাইয়া আছ সৃষ্টির কোনখানে!


ঊর্ধ্বে যাব না, লহো হাত ধরে তব সৃষ্টির কাছে,


কোথা তুমি, সেথা লয়ে যাও, এই অন্ধ ভিখারি যাচে!


কী ভিক্ষা চায় ভিখারি তোমার, আগে থেকে রাখো জেনে,


চাহিব যখন, হে চোর, তখন পলায়ো না হার মেনে।


আর কিছু নয়, চির প্রেমময়, তোমারে ভিক্ষা চাই,


এক তুমি ছাড়া এই ভিখারির কিছুই চাওয়ার নাই!


তব দেওয়া এই তনুমনপ্রাণ মোর যাহা কিছু আছে,


তুমি জান, কেন নিবেদন করে দিয়াছি তোমার কাছে।


যা-কিছু পেয়েছি, পাইতেছি যাহা, পাইব যা কিছু পরে,


সে যে তব দান, তাই নিবেদিত থাক উহা তব তরে।


তোমার দানের সম্মান, প্রভু, আমি কি রাখিতে পারি?


তব দান দাও সকলে বিলায়ে, আমারে করো ভিখারি!


তব দান মোর কামনা ও লোভ সঞ্চিত করে রাখে,


বঞ্চিত করে তোমার মিলনে, ওই সবই ঘিরে থাকে!


দান দিয়ে মোরে দিয়ো না ফিরায়ে, হে দানী, তোমারে দাও,


তব দান নিয়ে তব ভিখারিরে চিরতরে চিনে নাও!


তোমারেই চাই জেনে করিয়াছ চুরি ভিক্ষার ঝুলি,


ধরা পড়িয়াছ মনোচোর, দাও চোখের বাঁধন খুলি।


সব ভুলে যাই, কিছু মনে নাই, খেলাতেছিলে কী খেলা,


আমারই মতন ঘুমাইতে কারে দাওনি?


তব নাম লয়ে সুদূর মিনারে কে ডাকিছে ভোরবেলা?

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !