Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, November 28, 2016

বন্ধুরা এসো ফিরে

বন্ধুরা এসো ফিরে


বন্ধুর পথে চলিব আবার, বন্ধুরা এসো ফিরে


সেই আগেকার নিত্য শুদ্ধ প্রাণ-প্রবাহের তীরে।


প্রিয়ার চেয়েও প্রিয় ছিল মোর তোমাদের ভালোবাসা,


আমাদের মাঝে ছিল কত ভালো, কত আলো, কত আশা।


মৃত পুত্রেরে ভুলেছি, ভুলিনি তোমাদের সেই প্রাণ,


আজও মনে হলে বক্ষ বহিয়া নামে রোদনের বান।


তোমাদের কাছে থাকি না, একেলা রাতে মনে পড়ে সব,


নিথর শান্ত আনন্দ-বীণা করে উঠে কলরব!


বহ্নিগিরির উৎপাত সম এসেছিনু আমি কবে,


আজ মনে হয় স্বপ্ন – সে সব কথা কয় কেহ যবে।


চাঁদের মতন স্নিগ্ধ তোমরা মোরে করনিকো ভয়,


প্রেম-চন্দনে করেছিলে মোর অগ্নির দাহ ক্ষয়।


মোদের স্মৃতিতে জাগেনি কখনও জাতি-ধর্মের ভেদ,


মানুষে সবার বড়ো বলিতাম, মানিনি কোরান বেদ।


সহসা নিভিল আগুন! অগ্নি-গিরির পাষাণ বুকে


ফাগুনের ফুল ফুটিতে চাহিল অহেতুক কৌতুকে।


ছিল ফাগুনের ফুল কি লুকায়ে আগুনের ফুলকিতে,


দগ্ধ ললাট স্নিগ্ধ হইল নদীজল-উলকিতে!


বহুদিন পরে পথে যেতে যেতে হয়তো হয়েছে দেখা,


মনে হত মোরা হইনু দু-জন, আর নহি আমি একা!


  


ও কথা থাকুক! রাগ করিয়ো না, যদি এই কথা বলি –


আনারকলির বাগানে কচুরিপানার কুসুমকলি


আসিবে ভাসিয়া। বলিতে পার কি, মোর মনে হয় যেন –


শতদল হয়ে ছিনু যথা, সেথা আজ দলাদলি কেন।


কোন আনন্দ-মৃণালে বদ্ধ ছিনু রস-সরসীতে,


সেই আনন্দ হারায়ে, ছড়ায়ে পড়েছে কি ধরণিতে?


যেথা নির্মল মধু ছিল, সেথা বিষ ওঠে মাঝে মাঝে,


সেই বিষ-লেখা পড়ি, আর বুকে কাঁটার মতন বাজে।


মানুষে মানুষে যে-হিংসা আজ এনেছে অকল্যাণ,


অভাবে পড়িয়া স্বভাব ভুলিব? গাহিব কি তারই গান?


কবি ও শিল্পী হওয়া এই দেশে দুর্ভাগ্যের কথা,


বেনে-মাড়োয়ারি-ভক্ত এদেশে বাঁচে না মাধবীলতা।


জানি সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁহারা বেনে,


অর্থের লোভে তারাই এ বিদ্বেষ আনিয়াছে টেনে!


তাদেরই মেনে চলতে হবে কি? ওই রাক্ষুসে লোভে


দেশের জাতির অকল্যাণের কারণ হব কি সবে?


আছে দুর্দিন দুর্গতি ঋণ, ভবনে ব্যাধির বাসা,


তারই তরে মোরা ভঙিয়া দেব কি ভারতের সাধ আশা?


দশটি লোকের বেড়ে যাবে বাড়ি, ব্যাংকে জমিবে টাকা,


ভারত-ললাটে তারই তরে রবে মসি-কলঙ্ক আঁকা


আমাদের লেখা হয়ে? বন্ধু গো, অবুঝ চোখের বারি


এ-কথা ভাবিতে, বহে স্রোত মম, কিছুতে রুধিতে নারি।


বন্ধুরা ফিরে এসো, আজও দেশে মুষ্টিভিক্ষা মেলে,


এ পাপের ক্ষমা নাই, কোটিবার নরক ঘুরিয়া এলে!


দেশের জাতির ক্ষতি করে তবে অন্ন পড়িবে পাতে?


জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা লিখিতে লেখনী কাঁপে না হাতে?


লইব মাথায়, তোমরা যে পথে চল সে পথের ধূলি,


ক্ষমা করো, এর চেয়ে হও গিয়া রিকশাওয়ালা কি কুলি!


এই মহা অপরাধ করিয়ো না, আপনারে প্রতারণা


করিয়া, হে সখা, ক্ষুধার অশুচি কদন্ন আনিয়ো না!


অভিশপ্ত এ চাকরির টাকা অভিশাপ আনে ঘরে,


এই অপরাধে শান্তি কখনও পাইবে না ঘরে-পরে!


এই সাত কোটি বাঙালির ঘরে ঈর্ষা-আগুন জ্বালি


ভরিবে ভাতের থালা, সভাতলে নেবে মালা করতালি?


হে সখা, তোমরা জান, এ জীবনে বহু যশ আর মালা


পেয়েছি, – এ বুকে বিষের মতন আজও করে তাহা জ্বালা!


কেবলই আত্ম-প্রতিষ্ঠা চাহে ভারতের নেতা যত,


উহাদেরই লোভে হতেছে দেশের কল্যাণ অপগত!


  


ফিরে এসো সেই অতীত দিনের বন্ধুরা, পায়ে ধরি,


এর চেয়ে, এসো সহজ মৃত্যু-পথ ধরে মোরা মরি!


পলাতক ছিনু, ধরিয়া এনেছে নবযুগ পুন মোরে,


তোমরা না এলে নবযুগ পুন আসিবে কেমন করে?


সখা, তোমাদের সখ্য সাক্ষী! নেতা হইবার নেশা


কোনোদিন জাগে নাই এ জীবনে, এ নহে আমার পেশা।


পূর্ণের তৃষা ছাড়া সব কিছু নিয়েছেন কেড়ে ‘তিনি’


– যাঁর ইচ্ছায় আমারে তাঁহার ‘ইচ্ছা’ বলিয়া চিনি।


  


তবু আসিলাম, তবু ভাসিলাম আবার কর্মপথে,


পরম পূর্ণ তিনিই সারথি হউন আমার রথে।


একার মুক্তি চাহিতে আমারে দেয়নি ইচ্ছা তাঁর, –


পরম শূন্য হইতে ধূলিতে নামি তাই বারবার।


কিছুতেই যেন ভুলিতে নারি এ মাটির মায়ের মায়া,


মোর ধ্যানে হেরি আল্লার পাশে এই বাংলার ছায়া!


  


আনন্দধাম বাংলায় কেন ভূত-প্রেত এসে নাচে?


দেশি পরদেশি ভূতেরা ভেবেছে বাঙালি মরিয়া আছে!


এ ভূত তাড়াব ; পাষাণ নাড়াব, চেতনা জাগাব সেথা,


ভায়ের বক্ষে কাঁদিবে আবার এক জননীর ব্যথা।


তোমরা বন্ধু, কেহ অগ্রজ, অনুজ, সোদর সম,


প্রার্থনা করি, ভাঙিয়া দিয়ো না মিলনের সেতু মম!


এই সেতু আমি বাঁধিব, আমার সারা জীবনের সাধ,


বন্ধুরা এসো, ভেঙে দিব যত বিদেশির বাঁধা বাঁধ।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !