Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি

অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি


চরণারবিন্দে লহো অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি,


হে রবীন্দ্র, তব দীন ভক্ত এ কবির।


অশীতি-বার্ষিকী তব জনম-উৎসবে


আসিয়াছি নিবেদিতে নীরব প্রণাম।


হে কবিসম্রাট, ওগো সৃষ্টির বিস্ময়,


হয়তো হইনি আজও করুণাবঞ্চিত!


সঞ্চিত যে আছে আজও স্মৃতির দেউলে


তব স্নেহ করুণা তোমার, মহাকবি!


ধ্যান-শান্ত মৌন তব কাব্য-রবিলোকে


সহসা আসিনু আমি ধূমকেতুসম


রুদ্রের দুরন্ত দূত, ছিন্ন হর-জটা,


কক্ষচ্যুত উপগ্রহ! বক্ষে ধরি তুমি


ললাট চুমিয়া মোর দানিলে আশিস!


দেখেছিল যারা শুধু মোর উগ্ররূপ,


অশান্ত রোদন সেথা দেখেছিলে তুমি!


হে সুন্দর, বহ্নিদগ্ধ মোর বুকে তাই


দিয়াছিলে ‘বসন্তের’ পুষ্পিত মালিকা!


একা তুমি জানিতে হে, কবি মহাঋষি,


তোমারই বিচ্যুত-ছটা আমি ধূমকেতু!


আগুনের ফুলকি হল ফাগুনের ফুল,


অগ্নি-বীণা হল ব্রজকিশোরের বেণু।


শিব-শিরে শশিলেখা হল ধূমকেতু,


দাহ তার ঝরিলো গো অশ্রু-গঙ্গা হয়ে।


  


বিশ্ব-কাব্যলোকে কবি, তব মহাদান


কত যে বিপুল, কত যে অপরিমাণ


বিচার করিতে আমি যাব না তাহার,


মৃৎভাণ্ড মাপিবে কি সাগরের জল?


যতদিন রবে রবি, রবে সৌরলোক,


হে সুন্দর, ততদিন তব রশ্মিলেখা


দিব্যজ্যোতিঃ পুষ্প গ্রহ-তারকার মতো


অসীম গগনে রবে নিত্য সমুজ্জ্বল!


ছন্দায়িত হবে ছন্দে সৃষ্টি যতদিন,


ছন্দ-ভারতীর পায়ে বাণীর নূপুর


ঝংকারিবে যতদিন বৃষ্টিধারাসম


ততদিন মধুচ্ছন্দা করি, ছন্দ তব


লীলায়িত হবে মধুমতী-স্রোত সম।


বিহগের কন্ঠে গীত রবে যতদিন,


যতদিন রবে সুর দখিনা পবনে,


হিল্লোলিত সিন্ধুজলে ঝরনা-তটিনীতে,


বহিবে বিরহী-বুকে রোদন-প্রবাহ –


ততদিন তব গান তব সুর কবি


মর্মরিবে মরমির মরমে মরমে!


মৌনা যদি কোনোদিন হয় বীণাপাণি


তব বীণা কবি কভু হবে না নীরব।


যেমন ছড়ান রশ্মি সূর্য-নারায়ণ


সেই রশ্মি রূপ নেয় শত শত রঙে


পল্লবে ও ফুলে ফলে জলে স্থলে ব্যোমে,


তেমনই দেখেছি আমি বিমুগ্ধ নয়নে


অপরূপ রাগ-রেখা তোমার লেখায়, –


মুরছিত হইয়াছে আবেশে এ তনু।


  


দেখেছি তোমারে যবে হইয়াছে মনে


তুমি চিরসুন্দরের পরম বিলাস!


মানুষ এ পৃথিবীতে অন্তরে বাহিরে


কত সে উদার কত নির্মল মধুর


কত প্রিয়-ঘন প্রেমরসসিক্ত তনু


কত সে সুন্দর হতে পারে সর্বরূপে


তাই প্রকাশের তরে পরম সুন্দর


বিগ্রহ তোমার গড়েছিল ওগো কবি!


যখনই কবিতা তব পড়িয়াছি আমি


তার আস্বাদনে যেন হয়ে গেছি লয়,


রস পান করে আমি হয়ে গেছি রস,


বলিতে পারি না তাই সে রস কেমন।


তোমারে দেখিতে গিয়া দেখিয়াছি আমি


বক্ষে তব চির-রূপ-রসবিলাসীরে!


হারায়ে ফেলেছি সেথা সত্তা আপনার


কাঁদিয়াছি রূপমুগ্ধা রাধিকার মতো।


হে কবি, আজিও শুনি সে চির-কিশোর


তোমার বেণুতে গাহে যৌবনের গান।


সেথা তুমি কবি নও, ঋষি নহ তুমি,


সেথা তুমি মোর প্রিয় পরম সুন্দর!


  


শুনি আজও কত শত পাথরের ঢেলা


তোমারে নিষ্ঠুর বলে, বলে – প্রেম নাই।


মেঘের হুংকার শুধু শুনিল তাহারা,


দেখিল না রসধারা, দেখিল বিদ্যুৎ!


এ বিশ্বে অনন্ত রস ঝরে অনুক্ষণ


কত জন পাইয়াছে সে রসের স্বাদ?


সেই রসে তরুলতা হয় ফুলময়,


পাথরের নুড়ি বলে, পৃথিবী নীরস।


হে প্রেম-সুন্দর মম, আমি নাহি জানি


কে কত পেয়েছে তব প্রেম-রসধারা।


আমি জানি, তব প্রেম আমার আগুন


নিভায়ে, দিয়াছে সেথা কান্তি অপরূপ।


মনে পড়ে? বলেছিলে হেসে একদিন,


‘তরবারি দিয়ে তুমি চাঁছিতেছ দাড়ি!


যে জ্যোতি করিতে পারে জ্যোতির্ময় ধরা


সে জ্যোতিরে অগ্নি করি হলে পুচ্ছ-কেতু?’


হাসিয়া কহিলে পরে, ‘এই যশ-খ্যাতি


মাতালের নিত্য সান্ধ্য নেশার মতন।


এ মজা না পেলে মন ম্যাজম্যাজ করে


মধুর ভৃঙ্গারে কেন কর মদ্যপান?’


  


যে বহ্নিতরঙ্গ উঠেছিল মোর মাঝে


তোমার পরশে তাহা হল চন্দ্র-জ্যোতি।


মনে হল তুমি সেই নওলকিশোর


ঐশ্বর্য কাড়িয়া যিনি দেন শুধু রস।


যাঁহার বেণুর সুরে আঁখির পলকে


প্রেমে বিগলিত হয় স্বর্ণ-বৃন্দাবন!


  


হে রসশেখর কবি, তব জন্মদিনে


আমি কয়ে যাব মোর নব জন্মকথা!


আনন্দসুন্দর তব মধুর পরশে


অগ্নিগিরি গিরি-মল্লিকার ফুলে ফুলে


ছেয়ে গেছে! জুড়ায়েছে সব দাহজ্বালা!


আমার হাতের সেই খর তরবারি


হইয়াছে খরতর যমুনার বারি!


দ্রষ্টা তুমি দেখিতেছ আমাতে যে জ্যোতি


সে জ্যোতি হয়েছে লীন কৃষ্ণঘনরূপে!


অভিনন্দনের মদ চন্দনিত মধু


হইয়াছে, হে সুন্দর, তব আশীর্বাদে!


  


আজ আমি ভুলে গেছি আমি ছিনু কবি,


ফুটেছি কমল হয়ে তব করে রবি!


প্রস্ফুটিত সে কমল তব জন্মদিনে


সমর্পিনু শ্রীচরণে, লহো কৃপা করি


জানি না জীবনে মোর এই শুভদিন


আবার আসিবে ফিরে কবে কোন লোকে!


আমি জানি মোর আগে রবি নিভিবে না


তার আগে ঝরে যেন যাই শতদল!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !