Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

অভেদম্

অভেদম্


দেখিয়াছ সেই রূপের কুমারে, গড়িছে যে এই রূপ?


রূপে রূপে হয় রূপায়িত যিনি নিশ্চল নিশ্চুপ!


কেবলই রূপের আবরণে যিনি ঢাকিছেন নিজ কায়া


লুকাতে আপন মাধুরী যে জন কেবলই রচিছে মায়া!


সেই বহুরূপী পরম একাকী এই সৃষ্টির মাঝে


নিষ্কাম হয়ে কীরূপে সতত রত অনন্ত কাজে।


পরম নিত্য হয়ে অনিত্য রূপ নিয়ে এই খেলা


বালুকার ঘর গড়িছে ভাঙিছে সকাল-সন্ধ্যা বেলা।


আমরা সকলে খেলি তারই সাথে, তারই সাথে হাসি কাঁদি


তারই ইঙ্গিতে ‘পরম-আমি’রে শত বন্ধনে বাঁধি।


মোরে ‘আমি’ ভেবে তারে স্বামী বলি দিবাযামী নামি উঠি,


কভু দেখি – আমি তুমি যে অভেদ, কভু প্রভু বলে ছুটি।


  


একাকী হইয়া একা-একা খেলি, চুপ করে বসে থাকি।


ভালো নাহি লাগে, কেন সাধ জাগে খেলুড়িরে কাছে ডাকি!


সৃষ্টির ঘুড়ি উড়াই শূন্যে, আনন্দে প্রাণ নাচে,


দেখি সে লাটাই লুটায়ে পড়েছে কখন পায়ের কাছে।


বীজ রূপে রই – নিজ রূপ কই? খুঁজিতে সহসা দেখি


সেই বীজ-আমি মহাতরু হয়ে ছড়ায়ে পড়েছি – এ কী!


শাখাপ্রশাখায় পল্লবে-ফুলে ফলে-মূলে কত রূপে


কখন আমারে বিকশিত করি খেলিতেছি চুপে চুপে!


কত সে বিহগ-বিহগী আসিয়া বেঁধেছে আমাতে নীড়,


ঊর্ধ্বে নিম্নে কত অনন্ত আলো আঁধারের ভিড়।


অনন্ত দিকে অনন্ত শাখা, অনন্ত রূপ ধরি


উদ্ভিদ জড় জীব হয়ে আমি ফিরিতেছি সঞ্চরি।


  


চির-আনমনা উদাসীন, তাই নিজ সৃষ্টিরই মাঝে


হেরি কত শত ছন্দপতন অপূর্ণতা বিরাজে।


চমকি উঠিয়া সংহার করি আপনার সেই ভুল,


সেই ভুল দিয়া নতুন করিয়া ফুটাই সৃষ্টি-ফুল।


মৃত্যু কেমন লাগে মোর কাছে, শোনো সে বাণী অভয়,


আঁখির পলক পড়িলে যেমন ক্ষণিক সৃষ্টি-লয়,


একটি পলক আঁধারে হেরিয়া আবার সৃষ্টি হেরি,


মৃত্যুর পরে জীবন আসিতে ততটুকু হয় দেরি!


মৃত্যুর ভয় ভীত যারা, হয় তাদেরই নরকভোগ,


অমৃতে সেই ডুবে আছে, যার নিত্য আত্ম-যোগ!


মোরই আনন্দ সৃষ্টি করিছে স্ত্রী ও পুত্র আদি,


কেবলই মিলন লাগে নাকো ভালো, বিরহ রচিয়া কাঁদি।


  


কেবল শান্তি শ্রান্তি আনিলে নিজে অশান্তি আনি,


ভুলিয়া স্বরূপ ঠুলি পরে টানি শত কর্মের ঘানি।


রুদ্রের রূপে সংহার করি, প্রেমময় রূপে কাঁদি,


যারে ‘তুমি’ বল, সেই ‘আমি’ খুঁজি নিজের অন্ত আদি।


সংসারে আসি সং সেজে আমি – শত প্রিয়জন লয়ে,


আপনারে ভোগ করিতে জন্মি বিপুল তৃষ্ণা হয়ে।


যত ভোগ করি তত আপনার তৃষ্ণা বাড়িয়া যায়


অমৃত-মধু মদ হয়ে উঠে তৃষ্ণায় পিয়ালায়!


বন্ধু! কেমনে মিটিবে তৃষ্ণা পূর্ণেরে নাহি পেলে,


আমি যে নিজেই অপূর্ণরূপে এসেছি পূর্ণে ফেলে!


সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার – এই তিন রূপই যাঁর লীলা,


সেই সাগরের আমি যে ঊর্মি, বিরহিণী ঊর্মিলা!


  


দুখ শোক ব্যাধি নিজে লই সাধি, – কখনও অত্যাচারী-


অসুর সাজিয়া কেড়ে খাই – পুন দেবতা সাজিয়া মারি!


বিদ্বেষ নাই, আসক্তিহীন শুধু সে খেলার ঝোঁকে


অসাম্য করি সৃজন – আবার সংহার করি ওকে।


খেলিতে খেলিতে সহসা চকিতে দেখি আপনারই কায়া


শ্রী ও সামঞ্জস্যবিহীন এ কী কুৎসিত ছায়া!


সেই কুৎসিত শ্রীহীন অসুরে তখনই বধিতে চাই,


মোর বিদ্রোহ সাম্য-সৃষ্টি – নাই সেথা ভেদ নাই।


নাই সেথা যশ তৃষ্ণার লোভ, নাই বিরোধের ক্লেদ,


নাই সেথা মোর হিংসার ভয়, নাই সেথা কোনো ভেদ,


নাই অহিংসা-হিংসা, সেখানে কেবল পরম সাম,


রাজনীতি নাই, কোনো ভীতি নাই, ‘অভেদম্’ তার নাম।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !