Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

‘শাককুস সাদর’

‘শাককুস সাদর’


হৃদয়-উন্মোচন


এমনি করিয়া চরাইয়া মেষ, বংশী বাজায়ে গাহিয়া গান,


খেলে শিশু নবি রাখালের রাজা মরুর সচল মরূদ্যান।


চন্দ্র তারার ঝাড় লন্ঠন ঝুলানো গগন চাঁদোয়া-তল,


নিম্নে তাহার ধরণির চাঁদ খেলিয়া বেড়ায় চল-চপল।


ঘন কুঞ্চিত কালো কেশদাম কলঙ্ক শুধু এই চাঁদের,


ঘুমালে এ চাঁদ কৃষ্ণা তিথি গো, জাগিলে শুক্লা তিথি গো ফের।


চাঁদ কি আকাশে বংশী বাজায়, গ্রহ তারকারা শুনি সে রব


চরিয়া বেড়ায় মুক্ত আকাশে মেষ বৃষ রাশি রূপে গো সব?


খেলিতে খেলিতে আনমনা চাঁদ হারাইয়া যায় দূর মেঘে


অন্ধকারের অঞ্চলতলে, আনমনে পুন ওঠে জেগে।


খেলিতে খেলিতে সেদিন কোথায় হারাল বালক মোহাম্মদ


খুঁজিয়া বেড়ায় খেলার সাথিরা প্রান্তর বন গিরি ও নদ।


কোথাও সে নাই! খুঁজি সব ঠাঁই ফিরিয়া আসিল বালক দল,


হালিমারে বলে, ‘আমাদের রাজা হারাইয়া গেছে, দেখিবি চল!’


কাঁদিয়া ছুটিল হালিমা, খুঁজিল প্রান্তর গিরি মরু কানন,


রবিরে হারায়ে নিশীথিনী মাতা এমনই করিয়া খোঁজে গগন!


এমনই করিয়া সিন্ধু-জননী হারামণি তার খুঁজিয়া যায় –


কোটি তরঙ্গে ভাঙিয়া পড়িয়া ধূলির ধরায় বালুবেলায়।


কত নাম ধরে ডাকিল হালিমা, ‘ওরে জাদুমণি, সোনা মানিক!


ফিরে আয়, আয়, ও চাঁদ-মুখের হাসিতে আবার প্লাবিয়া দিক।


পেটে ধরি নাই, ধরেছি তো বুকে, চোখে ধরা মোর মণি যে তুই


মোর বনভূমে আসিসনি ফুল, এসেছিলি পাখি এ বনভুঁই!’


সহসা অদূরে চিরচেনা স্বরে শুনিরে ও কার মধুর ডাক,


ওকে ও মধুচ্ছন্দা গায়ন-কন্ঠে উহার ওকী ও বাক?


ও যেন শান্ত মরু-তপস্বী, ধেয়ানে উঠিছে কন্ঠে শ্লোক,


শিশু-ভাস্কর – উহারই আশায় জাগিয়া উঠিছে সর্বলোক।


হালিমা বক্ষে জড়ায়ে ধরিতে ভাঙিল যেন গো চমক তার,


যেন অনন্ত জিজ্ঞাসা লয়ে খুলিল কমল-আঁখি বিথার।


‘একী এ কোথায় আসিয়াছি আমি’ – জিজ্ঞাসে শিশু সবিস্ময়,


চুম্বিয়া মুখ হালিমা জননী, ‘তোর মার বুকে’ কাঁদিয়া কয়।


‘ওরে ও পাগল, কী স্বপন-ঘোরে ছিলি নিমগ্ন বল রে বল।


ওরে পথভোলা, কোন বেহেশ্‌ত-পথ ভুলে এলি করিয়া ছল?


দেহ লয়ে আমি খুঁজেছি ধরণি, মনে খুঁজিয়াছি শত সে লোক,


এমনই করিয়া, পলাতকা ওরে, এড়াতে হয় কি মায়ের চোখ?’


এবার বালক মায়ের কন্ঠ জড়াইয়া বলে, ‘জননী গো,


কী জানি কে যেন নিতি মোরে ডাকে যেন সোনার মায়ামৃগ!


আজও সে ডাকিতে এড়ায়ে সবারে এসেছিনু ছুটি এ-মরুপথ,


ছুটিতে ছুটিতে হারাইনু দিশা, ভুলিনু আমারে, মোর জগৎ।


এই তরুতলে আসিতে আমার নয়ন ছাইয়া আসিল ঘুম,


হেরিনু স্বপনে – কে যেন আসিয়া নয়নে আমার বুলায় চুম।


আলোর অঙ্গ, আলোকের পাখা, জ্যোতির্দীপ্ত তনু তাহার,


কহিল সে, ‘আমি খুলিতে এসেছি তোমার হৃদয়-স্বর্গদ্বার।


খোদার হাবিব – জ্যোতির অংশ ধরার ধূলির পাপ-ছোঁয়ায়


হয়েছ মলিন, খোদার আদেশে শুচি করে যাব পুন তোমায়।


ঐশী বাণীর আমিই বাহক,আমি ফেরেশতা জিব্রাইল,


বেহেশ্‌ত হতে আনিয়ছি পানি, ধুয়ে যাব তনু মন ও দিল্‌!’


এই বলি মোরে কহিল সালাম, সঙ্গিনী তার হুরির দল


গাহিতে লাগিল অপরূপ গান, ছিটাইল শিরে সুরভি জল।


তারপর মোরে শোয়াইল ক্রোড়ে, বক্ষ চিরিয়া মোর হৃদয়


করিল বাহির! হল না আমার কোনো যন্ত্রণা কোনো সে ভয়!


বাহির করিয়া হৃদয় আমার রাখিল সোনার রেকাবিতে,


ফেলে দিল, ছিল যে কালো রক্ত হৃদয়ে [জমাট] মোর চিতে।


ধুইল হৃদয় পবিত্র ‘আব-জমজম’আব-জমজম : মক্কা-শরিফের পবিত্র জমজম কূপের পূত বারি। দিয়ে জিব্রাইলজিব্রাইল : স্বর্গের দূত।,


বলিল, ‘আবার হল পবিত্র জ্যোতির্মহান তোমার দিল্‌।


এই মায়াবিনী ধরার স্পর্শে লেগে ছিল যাহা গ্লানি-কলুষ


যে কলুষ লেগে ধরার ঊর্ধ্বে উঠিতে পারে না এই মানুষ,


পূত জমজম-পানি দিয়া তাহা ধুইয়া গেলাম – তাঁর আদেশ,


তুমি বেহেশতি, তোমাতে ধরার রহিল না আর ম্লানিমা-লেশ!’


সেলাই করিয়া দিল পুন মোর বক্ষে রাখিয়া ধৌত দিল্,


সালাম করিয়া ঊর্ধ্বে বিলীন হইল আলোক-জিব্রাইল!’


বুঝিতে পারে না অর্থ ইহার – হালিমা কাঁদিয়া বুক ভাসায়,


বলে ‘কত শত জিন পরি আছে ওই পর্বতে ওই গুহায়,


আর তোরে আমি আসিতে দিব না মেষ-চারণের এই মাঠে


কোনদিন তোরে ভুলাইয়া তারা লয়ে যাবে দূর মরু-বাটে।‍’


ছুটিয়া আসিল পড়শি আবালবৃদ্ধবনিতা ছেলেমেয়ে,


বলে, ‘আসেবের’আসেব : ভূত-প্রেত। আসর হয়েছে উহার উপরে, দেখ চেয়ে!


অমন সোনার ছেলে, ওকি আর মানুষ, ও যে গো পথভোলা


কোকাফ্‌মুলুককোকাফ্‌মুলুক : কল্পকাহিনিতে কথিত দুর্গম ও সুবিস্তৃত পর্বত-বিশেষ, যেখানে নাকি পরিরা বাস করে থাকে। পরিস্থানের পরিজাদা কোনো রূপওলা!’


বিস্ময়াকুল নয়নে চাহিয়া খানিক কহিল মোহাম্মদ হাসি,


‘আম্মা গো ওরা কী বলিছে সব? আমি যে তোরেই ভালোবাসি!


তুমি আম্মা ও আমি আহ্‌মদ, পায়নি তো মোরে জিন পরি,


এসেছিল সেতো জিব্রাইল সে ফেরেশতা! মাগো, হেসে মরি!


এই তো তোমার কোলে আছি বসে, দিওয়ানা কি আমি? তুই মা বল!


আমারে পায়নি পরিতে, ওদেরে পাইয়াছে ভূতে তাই এ ছল!’


হালিমা জড়ায়ে বক্ষে বালকে বলে, ‘বাবা তুমি বলেছ ঠিক!’


মনের শঙ্কা যায় নাকো তবু, বাহিরে দস্যু ঘরে মানিক।


মনে পরে তার, সেদিনও ইহার জননী আমিনা এই কথাই


বলেছিল, ‘কই খোকার আমার কোথাও তেমন আভাসও নাই!


দেখিছ না ওর চোখ মুখ কত তেজ-প্রদীপ্ত, তাই লোকে


যা-তা বলে! আমি মানি না এসব, যদি দেখি ইহা নিজ চোখে!’


জননীর মন অন্তর্যামী, সে তো করিবে না কখনও ভুল,


দেখেনি তো এরা দুনিয়ায় কভু ফুটিবে এমন বেহেশ্‌ত-গুল!


বারে বারে চায় বালকের চোখে – ও যেন অতল সাগরজল,


কত সে রত্ন মণিমাণিক্য পাওয়া যায় যেন খুঁজিলে তল।


বক্ষে চাপিয়া চুমিয়া ললাট বলে, ‘যদি হস বাদশা তুই


মনে পড়িবে এ হালিমা মায়েরে? পড়িবে মনে এ পল্লি ভুঁই?’


‘মা গো মনে রবে।’ হাসিয়া বালক কহিল কন্ঠে জড়ায়ে মা-র ;


ভবিষ্যতের দফতরে লেখা রহিল সে কথা, ও বাণী যেন গো খোদ খোদার!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !