Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Monday, November 28, 2016

আত্মগত

আত্মগত


আর জিজ্ঞাসা করিব না কোনো কথা


আপনার মনে কয়ে যাব আমি আপন মনের ব্যথা।


ভোরের প্রথম-ফোটা ফুলগুলি গোপনে তুলিয়া আনি


অঞ্জলি দিতে তোমার দুয়ারে দাঁড়াই যুক্তপাণি।


আমার চেয়েও সকরুণ চোখে ফুলগুলি চেয়ে থাকে,


মোর সাথে ওরা তব পায়ে চাহে অর্পিতে আপনাকে, –


তব তনু হেরি ফুলগুলি যেন অধিক ফুল্ল হয়,


মনে ভাবে, ওই অঙ্গের সাথে কবে হবে পরিচয়!


তুমি দ্বিধাভরে যেন ভয়ে ভয়ে আস উহাদের কাছে!


ভাব বুঝি ওই ফুলের ঝাঁপিতে লোভের সাপিনি আছে!


মুখ ফুটে তাই বলিতে পার না, ‘ওই ফুলগুলি দাও।’


আমার গানের ফুলগুলি বোঝে, উহাদের ভয় পাও।


চেয়ে দেখি, হায়, বেদনায় মোর ফুল্ল ফুলের গুছি


সূর্যের নামে শপথ করিয়া কাঁদে – ‘শুচি মোরা শুচি।’


ছড়াইয়া দিই পথের ধুলাতে প্রেম-ফুল-অঞ্জলি,


‘দেখ সাপ নাই, নাই কাঁটা’ – আমি ফিরে যেতে যেতে বলি।


অবুঝ ভিখারি-মন যেতে যেতে পিছু ফিরে ফিরে চায় –


ছড়ানো একটি ফুল তুলে সে কি লুকাল এলো-খোঁপায়?


দূর হতে দেখে পাষাণ-মুরতি তেমনি দাঁড়ায়ে আছে,


ফুল এড়াইয়া চলে গেলে তুমি কলঙ্ক লাগে পাছে!


তোমার চলার পথে পড়ে যত এই পৃথিবীর ধূলি


তারও চেয়ে কি গো মলিনতা-মাখা আমার কুসুমগুলি?


ধুলায় তোমায় ভুলায় না পথ, পথ ভোলাবে কি ফুল?


ভয় পাও কি গো যদি শোনো পথে গাহে বন-বুলবুল?


তুমি শুনিলে না, তবু মোর কথা থামিতে চাহে না কেন?


তোমার ফুলের ফাল্গুন মাসে ঝোড়ো মেঘ আমি যেন!


তব ফুল-ভরা উৎসবে কেন জল ছিটিয়ে সে যায়


তব সাথে তার কোন সে জীবনে কোন যোগ ছিল, হায়!


ভয় করিয়ো না, মেঘ আসে – মেঘ শেষ হয়ে যায় গলে,


আমার না-বলা কথা বলা হলে আমিও যাইব চলে।


আমি জানি, এই ফাগুন ফুরাবে, খর-বৈশাখ এসে


কী যেন দারুণ আগুন জ্বালাবে তোমাদের এই দেশে।


ভালো লাগিবে না কিছু সেই দিন উৎসব হাসি গান,


ফাগুনে যে মেঘ এসেছিল, তার তরে কাঁদিবে গো প্রাণ।


 ডাকিবে, ‘এসো হে ঘনশ্যাম বারিবাহ,


 জ্বলে গেল বুক, জুড়াও জুড়াও দাহ।’


অভিমানী মেঘ সেদিন যদি গো নাহি আসে আর ফিরে,


যে সাগর থেকে মেঘ এসেছিল – যেয়ো সে সাগর তীরে।


তোমারে হেরিলে হয়তো আমার অভিমান যাব ভুলে,


তব কুন্তল-সুরভিতে সাড়া পড়িবে সাগরকূলে।


আমি উত্তাল তরঙ্গ হয়ে আছাড়ি পড়িব পায়ে,


জলকণা হয়ে ছিটায়ে পড়িব তব অঞ্চলে, গায়ে।


এই ভিখারির কথা শুনি আজ হাসিবে হয়তো প্রিয়া,


তবু বলি, তুমি কাঁদিয়া উঠিবে সাগর দেখিতে গিয়া।


মনে পড়ে যাবে, তোমার আকাশে মেঘ হয়ে কোনোদিন


কেঁদেছিল এই সাগর তোমারে ঘিরিয়া বিরামহীন।


তোমারে না পেয়ে শত পথ ঘুরে কেঁদে শত নদীনীরে


 সাগরের জল সাগরে এসেছে ফিরে।


তোমারে সিনান করায়েছিল সে অমৃতধারার কূলে


ছেয়ে দিয়েছিল তোমার ভুবন বিহ্বল ফুলে ফুলে!


তব ফুলময় তনু লয়ে ওঠে বৃন্দাবনে যে গীতি,


তোমারে যে আজ নিবেদন করে ত্রিলোক শ্রদ্ধা প্রীতি।


মেঘ-ঘনশ্যাম কোনো বিরহীর স্মৃতি আছে তার সাথে,


মেঘ হয়ে কেঁদে এসেছিল, গেছে আঁধারে মিশায়ে রাতে।


‍সাগরে যেদিন ঝাঁপায়ে পড়িবে! তোমার পরশ পেয়ে


প্রলয়-সলিলে রূপ ধরে আমি উঠিব গোপনে গেয়ে!


আমার হৃদয় ছোঁয় যদি প্রিয়া তোমার তনুর মায়া,


পরম শূন্যে ভাসিয়া উঠিবে আবার আমার কায়া।


আজ চলে যাই – এই পৃথিবীরে আর লাগে নাকো ভালো।


হেথা মানুষের নিশ্বাসে নিভে যায় যে প্রেমের আলো!


সেদিন যেন গো দ্বিধা নাহি আসে


কোনো লোক যেন নাহি থাকে পাশে,


যে নামে আমারে ডাকিলে না আজ সেদিন ডেকো সে নামে


কী বলে ডাকিলে বেঁচে উঠি আমি শুধাইয়ো রাধা শ্যামে।


  


যে নিরাধার শ্যাম শ্রীরাধার প্রেমে


রূপ ধরে আসে পৃথিবীর বুকে নেমে,


যদি কোনো দিন দেখা পাও তার – মোর স্মৃতি থাকে মনে,


রোদনের বান আনে যদি তব প্রেমের বৃন্দাবনে,


‘কোথায় হারিয়ে গেছি আমি’ শুধায়ো নিরালা ডাকি,


খুঁজিয়া আনিবে হয়তো আমারে তাঁহার পরম আঁখি।।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !