দীওয়ান-ই-হাফিজ
গজল ২
হে মোর সুন্দর! চাঁদের চাঁদমুখ তোমার রৌশনরৌশন : জ্যোতির্ময়। রূপ মেখেই,
রূপের জৌলুস তোমার টোলদার চিবুক-গন্ডের কূপ থেকেই।
ওষ্ঠে প্রাণ! হায়, দেখতে চাও তায় গোল-বদন ওই ঘোমটা-হীন,
জানাও ফরমানফরমান : হুকুম। জ্বলবে আর না নিববে জান্টার মোমটা ক্ষীণ!
তোমার কেশপাশ আমার দিল্ বাস – জমবে জোট সেই এক জা-গায়, -
আরজআরজ : প্রার্থনা, নিবেদন। এই ক্ষীণ মিটবে কোন দিন? আর না বিচ্ছেদ - দেকদেক : বিরক্তি। লাগায়!
নার্গিস-অক্ষি! হরলে সব সুখ তোমার নয়নার অত্যাচার
মস্ত্ চাউনির হস্তে তাই কই যাক সতীত্বও হত্যা ছার!
খুলবে এইবার নয়ন-পাত তার বদ-নসিববদ-নসিব : হতভাগ্য। মোর নিঁদ-আতুর,
আজ যে প্যারিরপ্যারি : প্রিয়তমা। উজ্লিউজ্লি : উজ্জ্বল। স্মিরতি-য়স্মিরতি-য় : স্মৃতিতে। আনলে নির্ঝর ক্ষীণ আঁসুর!
পাঠিয়ো ভোর বায় ফুল্ল ফুল তুল তোমার গণ্ডের ফুল-তোড়া!
যদিই পাই তায় তোমার বোঁস্তারবোঁস্তার : কুঞ্জ। খোশবুদাখোশবুদা : সুরভিত। খাকখাক : মৃত্তিকা। ধুল থোড়া!
দে খবর দিল্-দার পিয়ায় সই বক্ষে আজ মোর জোর ব্যথা,
মাথার দিব্যি রইল সই লো, জরুর কস তায় মোর কথা!
জামশেদেরজামশেদ : পারস্যের বাদশা, যাঁর আমলে শরাব-জাম বা এক নতুন ধরনের মদের পিয়ালার প্রচলন হয়। দর্-বারের সাকি! বাড়ুক পরমাই মদ্য-পিয়ো!
তোমার হস্তে এ-মদের ভাঁড় মোর পুরল নাই ভাই যদ্যপিও!
‘য়্যাজদ্’য়্যাজদ্ : পারস্যের এক প্রদেশ। মুল্কের বাসিন্দায় সব বলবে, বন্ধু ভোর-সমীর!
ভরুক ময়দান লুটাক পায়-পায় অকৃতজ্ঞের খণ্ড শির!
“বহুত দূর পথ বহুত বিচ্ছেদ স্মৃতির ভুল হায় হয়নি তায়,
তাদের বাদশার গোলাম আজকেও তাদের খোশনামখোশনাম : প্রশংসা। কয় সদাই।”
চলতে মোর পথ সামলো প্যারি, আঁচর, খাক আর খুন হতে;
তোমার এশ্কেরএশ্ক : প্রেম। নিরাশ খুন-দিল্ লোহুয়লোহুয় : রক্তে। পথ এ পূর্ণ যে!
এয়্ শাহানশা্হ! ওয়াস্তেওয়াস্ত : দোহাই। আল্লার শক্তি দাও এই, অহর্নিশ্-
আশমানের ন্যায় চুম্বি অমনি তোমার খাস রং-মহল শীষ!
আশিস চায় এই ‘হাফিজ’ হরদম, কও ‘আমিন’আমিন : তথাস্তু। সব খুব মনে –
“লাল শিরীনলাল শিরীন : মধুভরা। ঠোঁট পিয়ার রোজ পাই, ভরাই লাখ লাখ চুম্বনে!”
ছন্দসূত্র :–
এয়্ ফরোগে মাহে হোসন আজ রূয়ে রোখ্শা নে শুমা
আবরূয়ে খূবি আজ চা- হো জনখদা নে শুমা।
No comments:
Write comments