Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

আজাদ

আজাদ


কোথা সে আজাদ? কোথা সে পূর্ণ-মুক্ত মুসলমান?


আল্লাহ্ ছাড়া করে না কারেও ভয়, কোথা সেই প্রাণ?


কোথা সে ‘আরিফ’আরিফ : বিজ্ঞ, সাত্ত্বিক ব্যক্তি।
, কোথা সে ইমামইমাম : ধর্মগুরু।, কোথা সে শক্তিধর?


মুক্ত যাহার বাণী শুনি কাঁদে ত্রিভুবন থরথর!


কে পিয়েছে সে তৌহিদতৌহিদ : একেশ্বর তত্ত্ব। -সুধা পরমামৃত হায়?


যাহারে হেরিয়া পরান পরম শান্তিতে ডুবে যায়।


আছে সে কোরান-মজিদ আজিও পরম শক্তিভরা,


ওরে দুর্ভাগা, এক কণা তার পেয়েছিস কেউ তোরা?


সেই যে নামাজ রোজা আছে আজও, আজও সে কলমা আছে,


আজও উথলায় আব-জমজম কাবা শরিফের কাছে।


নামাজ পড়িয়া, রোজা রেখে আর কলমা পড়িয়া সবে


কেন হতেছিস দলে দলে তোরা কতলগাহেতেকতলগাহ : বধ্যভূমিতে। জবেহজবেহ : জবাই, হত্যা। ?


সব আছে, তবু শবের মতন ভাগাড়ে পড়িয়া কেন?


ভেবেছ কি কেউ কৌমেরকৌম : জাতি বা সম্প্রদায়। পির, নেতা; কেন হয় হেন?


আজিও তেমনই জামায়েত হয় ঈদ্গাহে মসজিদে,


ইমাম পড়েন খোৎবা, শ্রোতার আঁখি ঢুলে আসে নিদে!


যেন দলে দলে কলের পুতুল, শক্তি শৌর্যহীন,


নাহিকো ইমাম, বলিতে হইবে – ইহারা মুসলেমিন!


পরম পূর্ণ শক্তি-উৎস হইতে জনম লয়ে


কেমন করিয়া শক্তি হারাল এ জাতি? কোন সে ভয়ে


তিলে তিলে মরে, মানুষের মতো মরিতে পারে না তবু?


আল্লাহ্ যার প্রভু ছিল, আজ শয়তান তার প্রভু!


খুঁজিয়া দেখিনু, মুসলিম নাই, কেবল কাফেরে ভরা,-


কাফের তারেই বলি, যারে ঢেকে আছে শত ভীতিজরা।


অজ্ঞান-অন্ধকার যাহারে রেখেছে আবৃত করি,


নিত্য সূর্য জ্বলে, তবু যার পোহাল না বিভাবরী!


আল্লাহ্ আর তাহার মাঝারে কোনো আবরণ নাই,


এই দুনিয়ায় মুসলিম সেই – দেখেছ তাহারে ভাই?


আল্লার সাথে নিত্য-যুক্ত পরম শক্তিধর,


এই মুসলিম-কবরস্তানে পেয়েছ তার খবর?


চায় নাকো যশ, চায় নাকো মান, নিত্য নিরভিমান,


নিরহংকার আসক্তিহীন – সত্য যাহার প্রাণ;


জমায় না যে বিত্ত নিত্য মুসাফির গৃহহীন,


আশমান যার ছত্র ধরেছে, পাদুকা যার জমিন;


দিনে আর রাতে চেরাগ যাহার চন্দ্র সূর্য তারা,


আহার যাহার আল্লার নাম – প্রেমের অশ্রুধারা?


যার পানে চায় – সেই যেন পায় তখনই অমৃত বারি,


যাহারে ডাকে – সে অমনি তাহার সাথে চলে সব ছাড়ি?


অনন্ত জনগণ মাঝে পারে শক্তি সঞ্চারিতে,


যারে স্পর্শ করে সে অমনি ভরে ওঠে অমৃতে।


সেই সে পূর্ণ মুসলমান, সে পূর্ণ শক্তিধর,


‘উম্মি’উম্মি : মূর্খ। হয়েও জয় করিতে সে পারে এই চরাচর!


যে দিকে তাকাই দেখি যে কেবলই অন্ধ বদ্ধ জীব,


ভোগোন্মত্ত, পঙ্গু, খঞ্জ, আতুর, বদ-নসিব।


কাগজে লিখিয়া, সভায় কাঁদিয়া গুম্ফ শ্মশ্রু ছিঁড়ে,


আছে কেউ নেতা, লবে ইহাদের অমৃত-সাগরতীরে


আসে অনন্ত শক্তি নিয়ত যে মূল-শক্তি হতে


সেখান হইতে শক্তি আনিয়া ভাসাতে শক্তি-স্রোতে–


কোন তপস্বী করিছে সাধনা? বন্ধু, বৃথা এ শ্রম,


নিজে যার ভ্রম ভাঙেনি সেই কি ভাঙাবে জাতির ভ্রম?


দোজখেরদোজখ : নরক। পথে, ধ্বংসের পথে চলিয়াছে সারা জাতি,


শূন্য দু-হাত, ‘পাইয়াছি’ বলে তবু করে মাতামাতি!


  


সেদিন এমনই মাতালের সাথে পথে মোর হল দেখা,


শুধানু, ‘কী পেলে?’ সে বলে, দেখো না, কপালে রয়েছে লেখা?


কপালের পানে চাহিয়া আমার নয়নে আসিল বারি,


বাদশাহ হতে পারিত যে হায়, পেয়েছে সে জমাদারি!


দলে দলে আসে, কারও বুকে, কারও পেটে, কারও হাতে লেখা,


আজাদির চিন্ – অর্থাৎ কিনা চাকুরির মসিলেখা!


কাঁদিয়া কহিনু, – ওরে বে-নসিব, হতভাগ্যের দল,


মুসলিম হয়ে জনম লভিয়া এই কি লভিলি ফল?


অন্যেরে দাস করিতে, কিংবা নিজে দাস হতে, ওরে


আসেনিকো দুনিয়ায় মুসলিম, ভুলিলি কেমন করে?


ভাঙিতে সকল কারাগার, সব বন্ধন ভয় লাজ


এল যে কোরান, এলেন যে নবি, ভুলিলি সে সব আজ?


হায় গণ-নেতা ভোটের ভিখারি নিজের স্বার্থ তরে


জাতির যাহারা ভাবী আশা, তারে নিতেছ খরিদ করে।


সারা জাতি সারারাতি জেগে আছে যাহাদের পানে চেয়ে,


যে তরুণ দল আসিছে বাহিরে জ্ঞানের মানিক পেয়ে –


তাহাদের ধরে গোলাম করিয়া ভরিতেছ কার ঝুলি?


চা-বাগানের আড়কাঠি যেন চালান করিছ কুলি!


উহারা তরুণ, জানে না উহারা, কেন লভিল এ জ্ঞান,


তপস্যা করি জাগাবে উহারা ভারত-গোরস্তানভারত-গোরস্তান : কবরস্থান, সমাধি।!


ওদের আলোকে আলোকিত হবে অন্ধকার এ দেশ,


ওদেরই শৌর্যে ত্যাগে মহিমায় ঘুচিবে দীনের ক্লেশ।


তুমি চাকরির কশাইখানায় ঘুরিছ তাদেরে লয়ে,


তুমি কি জান না, ওখানে যে যায় – সে যায় জবেহ্জবেহ্ : ইসলামি মতে দোয়া পড়ে কন্ঠনালি কেটে হত্যা। হয়ে?


দেখিতেছ না কি শিক্ষিত এই বাঙালির দুর্দশা,


মানুষ যে হত, চাকরি করিয়া হয়েছে সে আজ মশা।


ভিক্ষা করিয়া মরুক উহারা, ক্ষুধা তৃষ্ণায় জ্বলে –


সমবেত হোক ধ্বংস-নেশায় মুক্ত আকাশতলে।


আগুন যে বুকে আছে – তাতে আরও দুখ-ঘৃতাহুতি দাও,


বিপুল শক্তি লয়ে ওরা হোক জালিমজালিম : অত্যাচারী।-পানে উধাও


যে ইস্পাতে তরবারি হয়, আঁশ-বটি করো তারে!


অন্ধ, খঞ্জ, জরাগ্রস্ত নিজেরা অন্ধকারে


ঘুরিয়া মরিছ, তাই কি চাহিছ সবাই অন্ধ হোক?


কৌম জাতির প্রাণ বেচে তুমি হইতেছ বড়োলোক।...


  


আজাদ-আত্মা! আজাদ-আত্মা! সাড়া দাও, দাও সাড়া!


এই গোলামির জিঞ্জির ধরে ভীম বেগে দাও নাড়া!


হে চির-অরুণ তরুণ, তুমি কি বুঝিতে পারনি আজও?


ইঙ্গিতে তুমি বৃদ্ধ সিন্ধবাদের বাহন সাজ!


জরারে পৃষ্ঠে বহিয়া বহিয়া জীবন যাবে কি তব,


জীবন ভরিয়া রোজা রাখি ঈদ আনিবে না অভিনব?


ঘরে ঘরে তব লাঞ্ছিতামাতা ভগ্নীরা চেয়ে আছে,


ওদের লজ্জা-বারণ শক্তি আছে তোমাদেরই কাছে।


ঘরে ঘরে মরে কচি ছেলেমেয়ে দুধ নাহি পেয়ে হায়,


তোমরা তাদেরে বাঁচাবে না আজ বিলাইয়া আপনায়?


আজ মুখ ফুটে দল বেঁধে বলো, বলো ধনীদের কাছে,


ওদের বিত্তে এই দরিদ্র দীনের হিস্‌সা আছে!


ক্ষুধার অন্নে নাই অধিকার ; সঞ্চিত যার রয়,


সেই সম্পদে ক্ষুধিতের অধিকার আছে নিশ্চয়।


মানুষেরে দিতে তাহার ন্যায্য প্রাপ্য ও অধিকার


ইসলাম এসেছিল দুনিয়ায়, যারা কোরবান তার –


তাহাদেরই আজ আসিয়াছে ডাক – বেহেশ্‌ত-পার হতে,


আনন্দ লুট হবে দুনিয়ায় মহা-ধ্বংসের পথে –


প্রস্তুত হও – আসিছেন তিনি অভয় শক্তি লয়ে –


আল্লাহ্‌ থেকে আবে-কওসরআবে-কওসর : স্বর্গের ঝরনাবারি। নবীন বার্তা বয়ে।


অন্তরে আর বাহিরে নিত্য আজাদমুক্ত যারা,–


নব-জেহাদের নির্ভীক দুর্বার সেনা হবে তারা,


আমাদেরই আনা নিয়ামতনিয়ামত : সৌভাগ্য, ধনসম্পদ। পেয়ে খাবে আর দেবে গালি,


জেহাদের রণে নওশানওশা : নবীন রাজা। সাজিয়া মোরা দিব হাততালি!


বলিব বন্ধু, মিটেছে কি ক্ষুধা, পেয়েছ কি কওসর?


বেহেশ্‌তে হবে তকবির ধ্বনি, আল্লাহু আকবর!


জিন্নাৎজিন্নাৎ : স্বর্গ। হতে দেখিব মোদের গোরস্তানের পর


প্রেমে আনন্দে পূর্ণ সেথায় উঠেছে নূতন ঘর।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !