Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 13, 2016

বেলাশেষে

ধরণি দিয়াছে তার


গাঢ় বেদনার


রাঙা মাটি-রাঙা ম্লান ধূসর আঁচলখানি


দিগন্তের কোলে কোলে টানি।


পাখি উড়ে যায় যেন কোন্ মেঘ-লোক হতে


সন্ধ্যাদীপজ্বালা গৃহপানে ঘরডাকা পথে।


আকাশের অস্ত-বাতায়নে


অনন্ত দিনের কোন্ বিরহিণী কনে


জ্বালাইয়া কনক-প্রদীপখানি


উদয়-পথের পানে যায় তার অশ্রু-চোখ হানি?


‘আসি’-বলে-চলে-যাওয়া বুঝি তার প্রিয়তম আশে,


অস্ত-দেশ হয়ে ওঠে মেঘবাষ্পভারাতুর তারই দীর্ঘশ্বাসে।


আদিম কালের ওই বিষাদিনী বালিকার পথ-চাওয়া চোখে –


পথপানে-চাওয়া-ছলে দ্বারে-আনা সন্ধ্যাদীপালোকে


মাতা বসুধার মমতার ছায়া পড়ে।


করুণার কাঁদন ঘনায় নত-আঁখি স্তব্ধ দিগন্তরে!


কাঙালিনি ধরা-মা-র অনাদি কালের কত অনন্ত বেদনা


হেমন্তের এমনই সন্ধ্যায় যুগযুগ ধরি বুঝি হারায় চেতনা।


  


উপুড় হইয়া সেই স্তূপীকৃত বেদনার ভার


মুখ গুঁজে পড়ে থাকে; ব্যথা-গন্ধ তার


গুমরিয়া গুমরিয়া কেঁদে কেঁদে যায়


এমনই নীরবে শান্ত এমনই সন্ধ্যায়। ...


ক্রমে নিশীথিনী আসে ছড়াইয়া ধুলায়-মলিন এলোচুল,


সন্ধ্যাতারা নিবে যায়, হারা হয় দিবসের কূল। ...


  


তারই মাঝে কেন যেন অকারণে হায়


আমার দু-চোখ পুরে বেদনার ম্লানিমা ঘনায়।


বুকে বাজে হাহাকার-করতালি,


কে বিরহী কেঁদে যায়, ‘খালি, সব খালি।


ওই নভ, এই ধরা, এই সন্ধ্যালোক,


নিখিলের করুণা যা-কিছু তোর তরে তাহাদের অশ্রুহীন চোখ।’


মনে পড়ে – তাই শুনে মনে পড়ে মম


কত না মন্দিরে গিয়া পথের সে লাথি-খাওয়া ভিখারির সম


প্রসাদ মাগিনু আমি –


‘দ্বার খোলো, পূজারি দুয়ারে তব আগত যে স্বামী!’


খুলিল দুয়ার, দেউলের বুকে দেখিনু দেবতা,


পূজা দিনু রক্ত-অশ্রু, দেবতার মুখে নাই কথা।


হায় হায় এ যে সেই অশ্রুহীন-চোখ,


কেঁদে ফিরি, ওগো এ কী প্রেমহীন অনাদর-হানা দেবলোক!


ওরে মূঢ়! দেবতা কোথায়?


পাষাণ-প্রতিমা এরা, অশ্রু দেখে নিষ্পলক অকরুণ মায়াহীন


          চোখে শুধু চায়।


এরাই দেবতা, যাচি প্রেম ইহাদেরই কাছে,


অগ্নি-গিরি এসে যেন মরুভূ-র কাছে হায় জল-ধারা যাচে।


  


আমারই সে চারি পাশে ঘরে ঘরে করে পূজা কত আয়োজন,


তাই দেখে কাঁদে আর ফিরে ফিরে চায় মোর ভালবাসা-ক্ষুধাতুর মন,


অপমানে পুন ফিরে আসে,


ভয় হয়, ব্যাকুলতা দেখি মোর কি জানি কখন কে হাসে।


  


দেবতার হাসি আছে, অশ্রু নাই;


ওরে মোর যুগ-যুগ অনাদৃত হিয়া, আয় ফিরে যাই । ...


এই সাঁঝে মনে হয়, শূন্য চেয়ে আরও এক মহাশূন্য রাজে


দেবতার-পায়ে-ঠেলে এই শূন্য মম হিয়া-মাঝে।


আমার এ ক্লিষ্ট ভালোবাসা,


তাই বুঝি হেন সর্বনাশা।


প্রেয়সীর কণ্ঠে কভু এই ভুজ এই বাহু জড়াবে না আর,


উপেক্ষিত আমার এ ভালোবাসা মালা নয়, খর তরবার।

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !