Search This Blog

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.

Blog Archive

Sunday, November 27, 2016

‘দাদা’

‘দাদা’


সব-কনিষ্ঠ পুত্র সে প্রিয় আবদুল্লারআবদুল্লা : হজরত মোহাম্মদের পিতা। পুত্রের জন্মের ছয়মাস পূর্বে প্রয়াত হন। শোকে,


সেদিন নিশীথে ঘুম নাকো মুত্তালিবেরমুত্তালিব : হজরত মোহাম্মদের পিতামহ। চোখে!


পঁচিশ বছর ছিল যে পুত্র আঁখির পুতলা হয়ে,


বৃদ্ধ পিতারে রাখিয়া মৃত্যু তারেই গেল কি লয়ে!


হয়ে আঁখিজল ঝরে অবিরল পঁচিশ-বছরি স্মৃতি,


সে স্মৃতির ব্যথা যতদিন যায় তত বাড়ে হায় নিতি!


বাহিরে ও ঘরে বক্ষে নয়নে অশ্রুতে তারে খোঁজে


সহসা বিধবা আমিনারে হেরি সভয়ে চক্ষু বোজে!


ওরে ও অভাগি, কে দিল ও বুকে ছড়ায়ে সাহারা-মরু?


অসহায় লতা গড়াগড়ি যায় হারায়ে সহায়-তরু!


আঙনে বেড়ায় ও যেন রে হায় শোকের শুভ্রশিখা,


রজনিগন্ধা বিধবা মেয়েরে লয়ে কাঁদে কাননিকা!


মন্থরগতি বেদনা-ভারতী আমিনা আঙনে চলে,


হেরিতে সহসা মুত্তালিবের আঁধার চিত্ততলে


ঈষৎ আলোর জোনাকি চমকি যায় যেন ক্ষণে ক্ষণে,


আবদুল্লার স্মৃতি রহিয়াছে ওই আমিনার সনে।


আসিবে সুদিন আসিবে আবার, পুত্রে যে ছিল প্রাণ


পুত্র হইতে পৌত্রে আসিয়া হবে যে অধিষ্ঠান।


দিন গোনে মনে মনে আর কয়, ‘বাকি আর কত দিন,


লইয়া অ-দেখা পিতার স্মৃতিরে আসিবি পিতৃহীন!’


  


মুত্তালিবের আঁধার চিত্তে জ্বলেছে সহসা বাতি,


সেদিন আসিবে যেন শেষ হলে আজিকার এই রাতি!


চোখে ঘুম নাই শূন্যে বৃথাই নয়ন ঘুরিয়া মরে,–


নিশি-শেষে যেন অতন্দ্র চোখে তন্দ্রা আসিল ভরে!


কত জাগে আর লয়ে হাহাকার, আঁধারের গলা ধরি


আর কতদিন কাঁদিবে গো, চোখে অশ্রু গিয়াছে মরি!


আয় ঘুম হায়, হয়তো এবার স্বপনে হেরিব তারে,


বিরাম-বিহীন জাগি নিশিদিন খুঁজিয়া পাইনি যারে!


হেরিল মুত্তালিব অপরূপ স্বপ্ন তন্দ্রা-ঘোরে,–


অভূতপূর্ব আওয়াজ যেন গো বাজিছে আকাশ ভরে!


ফেরেশতা সব যেন গগনের নীল শামিয়ানা-তলে


জমায়েত হয়ে তকবীরতকবীর : আল্লাহ আকবর ধ্বনি। হাঁকে, সে আওয়াজ জলে থলে


উঠিল রণিয়া। ‘সাফা’সাফা : মক্কা-মদিনার পর্বতসঙ্কুল অঞ্চল। ‘মারওয়ান’মারওয়ান : মক্কা-মদিনার পর্বতসঙ্কুল অঞ্চল। গিরি-যুগ সে আওয়াজে


কাঁপিতে লাগিল, উঠিল আরাবআরাব : দৈববাণী।, ‘আসিল সে ধরা মাঝে!’


কে আসিল ? সে কী আমিনার ঘরে? ছুটিতে ছুটিতে যেন


আসিল যে ঘরে আমিনা! ওকি ও, গৃহের ঊর্ধ্বে কেন


এত সাদা মেঘ ছায়া করে আছে? শত স্বর্গের পাখি


বসিতেছে ওই গেহ-পরি যেন চাঁদের জোছনা মাখি!


ঝুঁকিয়া ঝুঁকিয়া দেখিছে কী যেন গ্রহ তারাদল আসি


আকাশ জুড়িয়া নৌবত বাজে ভুবন ভরিয়া বাঁশি!...


টুটিল তন্দ্রা মুত্তালিবের অপরূপ বিস্ময়ে –


ছুটিল যথায় আমিনা – হেরিল নিশি আসে শেষ হয়ে।


আমিনার শ্বেত ললাটে ঝলিত যে দিব্য জ্যোতি-শিখা,


কোলে সে এসেছে – হাতে চাঁদ তার ভালে সূর্যের টিকা!


সে রূপ হেরিয়া মুর্ছিত হয়ে পড়ল মুত্তালিব,


একী রূপ ওরে একী আনন্দ একী এ খোশনসিব!


চেতনা লভিয়া পাগলের প্রায় কভু হাসে কভু কাঁদে,


যত মনে পড়ে পুত্রে, পৌত্রে তত বুকে লয়ে বাঁধে!


পৌত্রে ধরিয়া বক্ষে তখনই আসিলেন কাবা-ঘরে,


বেদি পরে রাখি শিশুরে করেন প্রার্থনা শিশু তরে।


‘আরশে’ থাকিয়া হাসিলেন খোদা – নিখিলের শুভ মাগি


আসিল যে মহামানব – যাচিছে কল্যাণ তারই লাগি!


ছিল কোরেশেরকোরেশ : মক্কার একটি সম্প্রদায়। সর্দার যত সে প্রাতে কাবায় বসি


যোগ দিল সেই ‘মুনাজাতে’মুনাজাত : আবেদন প্রার্থনা। সবে আনন্দে উচ্ছ্বসি।


  


সাতদিন যবে বয়স শিশুর – আরবের প্রথামতো


আসিল ‘আকিকা’আকিকা : নবজাত শিশুর নামকরণ, কেশকর্তন ইত্যাদি উপলক্ষে পশুর মাংস বিতরণ বা ভোজন করানো। উৎসবে প্রিয় বন্ধু স্বজন যত!


উৎসব শেষে শুধাল সকলে শিশুর কী নাম হবে,


কোন সে নামের কাঁকন পরায়ে পলাতকে বাঁচি লবে।


কহিল মুত্তালিব বুকে চাপি নিখিলের সম্পদ,–


“নয়নাভিরাম! এ শিশুর নাম রাখিনু ‘মোহাম্মদ’!”


চমকে উঠিল কোরেশির দল শুনি অভিনব নাম,


কহিল, ‘এ নাম আরবে আমরা প্রথম এ শুনিলাম।


বনি-হাশেমেরবনি-হাশেম : হাশেম বংশের সন্তান। গোষ্ঠীতে হেন নাম কভু শুনি নাই,


গোষ্ঠী-ছাড়া এ নাম কেন তুমি রাখিলে, শুনিতে চাই!’


আঁখিজল মুছি চুমিয়া শিশুরে কহিলেন পিতামহ –


“এর প্রশংসা রণিয়া উঠুক এ বিশ্বে অহরহ,


তাই এরে কহি ‘মোহাম্মদ’ যে চির-প্রশংসমান,


জানি না এ নাম কেন এল মুখে সহসা মথিয়া প্রাণ।”


নাম শুনি কহে আমিনা –‘স্বপ্নে হেরিয়াছি কাল রাতে


‘আহ্‌মদ’ নাম রাখি যেন ওর!’ ‘জননী, ক্ষতি কি তাতে’


হাসিয়া কহিল পিতামহ, ‘এই যুগল নামের ফাঁদে,


বাঁধিয়া রাখিনু কুটিরে মোদের তোমার সোনার চাঁদে!’


একটি বোঁটায় ফুটিল গো যেন দুটি সে নামের ফুল,


একটি সে নদী মাঝে বয়ে যায়, দুইধারে দুই কূল!

No comments:
Write comments

Interested for our works and services?
Get more of our update !